গত সোমবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ও দায়রা জজ আদালত বহুল আলোচিত দুটি মামলার রায় দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হলো চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠের কাছে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা। প্রায় তিন দশক আগে গুলি করে ২৪ জনের হত্যার ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত গণহত্যা’ আখ্যা দিয়েছেন আদালত। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায়ে তৎকালীন ৫ পুলিশ সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া দণ্ডবিধির ৩২৬ ধারায় প্রত্যেকের আরও দশ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
অপরটি অর্থাৎ ঢাকার পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে প্রায় দুই দশক আগে বোমা হামলা মামলায় ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া আসামিদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের রায় দিয়েছেন।
গুরুতর অপরাধের প্রাথমিক আইনি প্রতিকার পেতে বাংলাদেশকে একটির জন্য ৩১ বছর, অপরটির জন্য ১৯ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবে এই দীর্ঘ বিলম্ব সত্ত্বেও যে অবশেষে রায় পাওয়া গেল, এ-ও কম স্বস্তির বিষয় নয়। বিচার কখনো সম্পন্ন না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়াও শ্রেয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সিপিবির সমাবেশে হামলা দেশে বহুল আলোচিত বোমা হামলাগুলোর একটি। বস্তুত ১৯৯৯ সালে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর সমাবেশে হামলার মধ্য দিয়ে দেশে এ ধরনের বোমা হামলার সূচনা হয়। এর পর পল্টনে সিপিবির সমাবেশে এবং রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়। এর পর ধারাবাহিকভাবে দেশে একের পর এক বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনার ওপর ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ময়মনসিংহে সিনেমা হলে বোমা হামলা, দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা এবং হবিগঞ্জে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ওপর বোমা হামলাসহ আওয়ামী লীগের আরও কয়েকটি সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা মামলার রায় সন্ত্রাসীদের জন্য একটি কঠোর বার্তা সন্দেহ নেই। আমরা চাই চূড়ান্ত বিচার দ্রুত সম্পন্ন হোক, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সবার মধ্যে এই উপলব্ধি জাগুক যে, রাজনীতিকে প্রতিহিংসা ও সহিংসতা থেকে মুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।