স্বল্প সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ নিতে সাড়া নেই সরকারি চাকরিজীবীদের। প্রথম দিকে এই ঋণের সুদের হার ছিল ১০ শতাংশ। কিন্তু চলতি বছরে তা কমিয়ে ৯ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু এই ঋণ নেয়ার আগ্রহ আশানুরূপ নয় বলে মন্তব্য করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। শুধু তা-ই নয়, ঋণ নেয়ার জন্য প্রাপ্ত আবেদন ‘অপ্রতুল’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দেড় বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও, এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন সরকারি চাকরিজীবী এই ঋণ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে সরকারের উচ্চ কর্মকর্তারা এই ঋণ নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে গৃহনির্মাণ ঋণ কার্যক্রমের বিষয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সহজ করা হচ্ছে ঋণ ও কিস্তি পরিশোধ কার্যক্রম। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে এখন থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাসা ভাড়াকে ঋণের কিস্তি হিসেবে (ইএমআই) বিবেচনা করা হবে। শুধু তা-ই নয়, ঋণ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেক শাখায় গৃহনির্মাণ ঋণ সংক্রান্ত ডেস্ক স্থাপন করা হবে এবং প্রতিটি শাখা (ব্যাংকের শাখায়) গৃহনির্মাণ ঋণ সংক্রান্ত ব্যানার/ফেস্টুন প্রদর্শন করে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। এ তথ্য অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রের।
জানা গেছে, সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালার আওতায় এই কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে একটি সভা চলতি মাসে অর্থ বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যবিবরণীতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করা হবে।
এতে বলা হয়, ঋণ কার্যক্রম এখন পর্যন্ত আশানুরূপ পর্যায়ে পৌঁছতে সক্ষম হয়নি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের টার্গেট অনুযায়ী এই পর্যন্ত প্রাপ্ত আবেদনের সংখ্যাও অপ্রতুল। গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদানের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনা, গ্রাহক বাড়ানো এবং বিষয়টিকে আরো সহজ করার জন্য সভায় বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছেÑ গৃহনির্মাণ ঋণের কিস্তি সংক্রান্ত হিসাব এবং সরকার প্রদত্ত সুদ ভর্তুকি প্রদান প্রক্রিয়াকে সহজীকরণের উদ্দেশ্যে প্রতি মাসের ৫ তারিখে ঋণের কিস্তি প্রদানের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো তাদের প্রধান অফিস/জোনাল অফিসে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে একটি কর্মশালার আয়োজন করতে হবে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহনির্মাণ ঋণ পরিশোধে সমহারে মাসিক কিস্তি বা ইএমআইয়ের টাকা বেতন থেকে কেটে নেয়া হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে সরকারি চাকজীবীরা ইচ্ছা করলে বেতন থেকে টাকা কাটা বন্ধ করতে পারবেন। এর পরিবর্তে তারা মাসিক কিস্তির টাকা পরিশোধে বাসা ভাড়াকে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এ বাসা ভাড়া কি গৃহনির্মাণ ঋণ নিয়ে বানানো বাড়ির ভাড়া নাকি বেতনের সাথে যে বাসা ভাড়া দেয়া হয় তা এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। এজন্য একটি ধারণাপত্র তৈরি করছে অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। শিগগিরই এ নিয়ে বৈঠকে বসবে দুই বিভাগ। মূলত গৃহনির্মাণ ঋণে সাড়া না পাওয়ায় এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, স্বল্প সুদে সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহঋণ কার্যক্রম ১ জুলাই ২০১৮ সাল থেকে শুরু হয়। এই ঋণের আওতায় একজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হচ্ছে। শুরু থেকে গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের হার ছিল ১০ শতাংশ। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতা চাকরিজীবী দেবেন ৫ শতাংশ, বাকি ৫ শতাংশ সরকার থেকে ভর্তুকি দেয়া হবে। কিন্তু চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ঋণের সুদের হার ১ শতাংশ কমিয়ে ৯ শতাংশ করা হয়েছে। এই ৯ শতাংশের মধ্যে ঋণ গ্রহীতাকে আগের মতো ৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। বাকি ৪ শতাংশ সরকার থেকে দেয়া হবে। এ বছর থেকে যাদের ঋণ দেয়া হবে শুধু তারাই ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন। অর্থ বিভাগের হিসাবে, ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর গৃহনির্মাণ ঋণের সুবিধায় এক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রয়োজন পড়বে। পাশাপাশি প্রায় দেড় হাজার বিচারক এর আওতায় আছেন। এবার নতুন করে যোগ হচ্ছে ১৪ হাজার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ফলে ভর্তুকির অঙ্কটা দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে।