দেশি ও আন্তর্জাতিক চোরাচালানকারী চক্র অরক্ষিত সীমান্ত ও বিট খাটাল থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তকে স্বর্ণ পাচারের নতুন নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে।
সম্প্রতি বাখেরআলী সীমান্ত থেকে ২০টি সোনার বারসহ রবু নামে এক পাচারকারীকে আটক করেছে ৫৩ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। পরে, এ ঘটনায় সদর থানায় মামলা দায়ের করে বিজিবি। স্বর্ণ চোরাচালানকারী রবু চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গোঠাপাড়ার আবদুল মান্নানের ছেলে।
এরপর, গত বৃহস্পতিবার সকালে সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের জিরো পয়েন্ট এলাকায় তিনটি স্বর্ণের বারসহ ভারতগামী মোহাম্মদ আলী নামে একজনকে আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। জুতার মধ্যে লুকিয়ে বারগুলো ভারতে পাচারের সময় আটক করা হয় আলীকে। তিনি ফেনী জেলার রামপুরা গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে।
সোনামসজিদ শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের সুপার মো. শাহজাহান মিয়া জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে সোনামসজিদ জিরো পয়েন্টে বিজিবির তল্লাশি চৌকির সামনে ভারতগামী পাসপোর্টধারী যাত্রী মোহাম্মদ আলীকে আটক করে তল্লাশি চালানো হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তার কাছে থাকা তিনটি স্বর্ণের বারের কথা স্বীকার করে এবং তার পায়ের জুতার ভেতরে লুকানো বারগুলো বের করে দেয়। এ ঘটনায় শিবগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলকে ঘিরে স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের একটি শক্তিশালী চক্র রয়েছে। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতে স্বর্ণ পাচার করছে তারা। হুন্ডি ব্যবসায় প্রশাসনের নজরদারির কারণে ভারতে সোনা পাচার হচ্ছে। স্বর্ণ বিক্রির টাকা দিয়ে মাদক ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন চোরাচালান পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসছে তারা।
স্বর্ণ পাচারকারী চক্রটি বাংলাদেশ ও ভারত দুদেশেই অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়ায় মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও গরুর রাখালদের মাধ্যমে সীমান্ত পথে স্বর্ণ পাচার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পাচারকারীদের কেউ কেউ আটক হলেও পর্দার আড়ালে থেকে যাচ্ছে প্রকৃত চোরাচালানকারীরা।
জানা যায়, স্বর্ণ চোরাচালানকারীরা বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি এবং ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের চোখ এড়িয়ে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। গোপন সংবাদ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই স্বর্ণের চালান আটক করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, ভারতের সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৭ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এ সীমান্তের একটি বড় অংশে কাঁটা তারের বেড়া না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এ রুটটিকে মাদক ও চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা।
দেশে মাংসের চাহিদা পূরণ ও রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৪ সালে বিট-খাটাল নীতিমালা জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নীতিমালা জারির পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে নয়টি বিট-খাটাল গড়ে ওঠে। বিট-খাটালে গরু ও মহিষ আমদানির সুযোগ নিয়ে চোরাচালানকারীরা ভারতীয় বিভিন্ন পণ্যের সাথে হরহামেশাই দেশে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্রের চালান ঢোকাচ্ছে। যা পরে হাতবদল হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার অপরাধ চক্রের সদস্যদের হাতে ছড়িয়ে পড়ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুবুর রহমান খান বলেন, ‘মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি সীমান্ত এলাকা থেকে স্বর্ণের বার জব্দ করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত স্বর্ণ পাচারের স্থায়ী রুট হিসেবে পরিণত হওয়ার আগেই চোরাচালানকারীদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’