আবারও ঘটেছে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা। এবার পাবনার সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি রিয়াজ উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের শরীরচর্চার শিক্ষক আবু বক্কার সিদ্দিককে পিটিয়ে জখম করেছে একই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আশিক শেখ ও বহিরাগত বখাটেরা। আহত শিক্ষক জানিয়েছেন, আশিক বহিরাগত ছেলেদের স্কুলে নিয়ে এসে প্রায়ই ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করত। তিনি এর প্রতিবাদ করেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার আশিক ও বহিরাগতরা লাঠি ও রড দিয়ে আবু বক্কার সিদ্দিককে পিটিয়ে জখম করে। তিনি বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ন্যক্কারজনক। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধও বটে। কাজেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে একের পর এক শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটছে। ঘটছে ছাত্র কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনাও। এমনকি ছাত্রের আঘাতে শিক্ষকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। গত জুনে ঢাকার আশুলিয়ায় এক কলেজ শিক্ষককে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছিল নিজ প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই শিক্ষক।
প্রশ্ন হলো, এসব ঘটনা কিসের লক্ষণ? বস্তুত শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সমাজদেহের অসুস্থতাই প্রকাশ পায়। সমাজে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের এতটাই অবক্ষয় হয়েছে যে, এমন নীতি-নৈতিকতাহীন ও নৃশংস ঘটনা ঘটাতেও দ্বিধা করছে না অনেক শিক্ষার্থী। শিক্ষক হলেন অভিভাবকতুল্য। তিনি একইসঙ্গে শিক্ষাগুরু ও পথপ্রদর্শক। একজন শিক্ষকের প্রভাব শিক্ষার্থীর মধ্যে সারাজীবন ধরে বহমান থাকে। এজন্যই শিক্ষকের মর্যাদা পিতামাতার মর্যাদার সমান বলে বিবেচনা করা হয়।
বলা হয়ে থাকে, সারাজীবন শিক্ষককে সম্মান জানানোর পরও তার ঋণ শোধ করা যায় না। অথচ সেই শিক্ষকরা আজ পদে পদে লাঞ্ছিত, নিগৃহীত ও অপমানিত হচ্ছেন ছাত্রের হাতে! এ প্রবণতা রোধ করতে হবে কঠোরভাবে। শিক্ষককে লাঞ্ছনার জন্য আইনে কঠিন শাস্তির বিধান করতে হবে।
পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। শিক্ষকদের নিরাপত্তা বিধানে রাষ্ট্রকে নিতে হবে বিশেষ ব্যবস্থা। আমরা চাই, শিক্ষক আবু বক্কার সিদ্দিকের লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত সবার কঠোর শাস্তি হোক। তারা যেন কোনোক্রমেই শাস্তি এড়িয়ে যেতে না পারে।