প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকারের নানামুখি পদক্ষেপে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, ‘২০০৮-২০০৯ অর্থবছরের তুলনায় আমদানি শুল্ক থেকে রাজস্ব আহরণ তিনগুণের অধিক বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৬৩ হাজার ৩৮২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। আমাদের গৃহীত এসকল পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে; বিশ্বে ‘উন্নয়নের বিস্ময়’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।’
রোববার আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে শনিবার দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ বছরের আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘জনগণ তথা বিশ্ব উন্নয়ন তরান্বিত করতে কাস্টমস’।
বাংলাদেশ কাস্টমস তাদের পেশাগত উৎকর্ষতা অর্জনের মাধ্যমে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে এমন আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আগামী ১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে ১৭ই মার্চ ২০২১ সময়কে মুজিববর্ষ ঘোষণা করেছি। এ সময়ে বাংলাদেশ এবং ইউনেস্কো যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করবে। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যমআয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও শিল্পায়নের উপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। যার ফলে দেশে রাজস্ব আদায়ের বহুমুখী খাত সৃষ্টি হয়েছিলো। জাতির পিতার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে মাত্র সাড়ে তিন বছরেই যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশে রূপান্তরিত হয়েছিলো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০০৯ সাল থেকে পরপর তিনদফা সরকার গঠন করে সমগ্র দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা কাস্টমস আইন, ১৯৬৯ রহিত করে যুগোপযোগী, সহজ, সমন্বিত ও সুসংহত নতুন কাস্টমস আইন, ২০১৪ প্রণয়ন করেছি, যা ২০১৬ সালের ১ জুলাই হতে কার্যকর হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার ‘কাস্টম মডারেনাইজেশান স্ট্যাটেজিক এ্যাকশান প্লান- ২০১৯-২০২০’ শীর্ষক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ লক্ষ্য অর্জনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অতি সংবেদনশীল তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়াকে আরো সহজতর করেছি। ইতোমধ্যে আমরা ৩৮টি ভিন্ন মন্ত্রণালয়/সংস্থার সমন্বিত সেবা কার্যক্রম ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইনডো বাস্তবায়ন শুরু করেছি।
তিনি বলেন, ‘১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি জেনারেল এগ্রিমেন্ট ওন ট্যারিফ এন্ড ট্রেড- (জিএটিটি)-এর মূলনীতির উপর ভিত্তি করে বিশ্ব কাস্টমস সংস্থা (ডাব্লুসিও) আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সংস্থাটি আধুনিক ও সহজতর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে এর সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে নেতৃত্ব, পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান-সহ বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বছর সংস্থাটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত দিকসমূহকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সদস্যভুক্ত ১৮৩টি দেশের টেকসই ভবিষ্যৎ অর্জনে কাস্টমস এর সক্রিয় ভূমিকার উপর গুরত্বারোপ করেছে। তাছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন ও বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নের উপরেও জোর দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস ২০২০’ পালন করা হচ্ছে জেনে আনন্দ প্রকাশ করেন এবং এ উপলক্ষে বাংলাদেশ কাস্টমসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, সেবাগ্রহীতা ও অংশীজন-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান। এছাড়াও তিনি ‘আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস ২০২০’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।