নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ইজ এ ল্যান্ড অব স্মাইল। এটাই হচ্ছে বর্তমানের বাংলাদেশ। নানা প্রতিকূলতা সত্বেও বাঙালিরা ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থেকে নিজেরা হাসেন এবং অন্যকেও হাসাতে পারে। এবার দেশ ও প্রবাসে শারদীয় দুর্গোৎসবসমূহে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের অবিকল একটি চিত্র প্রস্ফুটিত হয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা সমিতি’র ৩৩তম দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির ফ্লাশিংয়ে ‘গুজরাটি সমাজ’ মিলনায়তনে বক্তব্যকালে কন্সাল জেনারেল বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় সম্প্রীতি, সামাজিক সম্প্রীতির অনন্য এক উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশে আজকের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব হচ্ছে পারস্পরিক সম্প্রীতির এই বন্ধন অটুট থাকায়। এটাই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার মূলমন্ত্র এবং সেই অভিযাত্রায় যোগ হয়েছে চলমান উন্নয়ন-পরিক্রমা।’
ড. মনিরুল পূজা-অর্চনায় নতুন প্রজন্মের সদস্য, বিশেষ করে যাদের জন্ম আমেরিকায়, বেড়ে উঠছেও আমেরিকার আলো-বাতাসে, তাদের সরব উপস্থিতির জন্যে অভিভাবকগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এরাই হচ্ছে বাঙালিত্বকে বহুজাতিক এই সমাজে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম অবলম্বন। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই তাদেরকে সম্পৃক্ত রাখা জরুরী।
বিজয়ার দশমীতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রবাসীর উপস্থিতি ঘটায় সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান বাংলাদেশ পূজা সমিতির সভাপতি কুমার বাবুল সাহা। শুভেচ্ছা বক্তব্যে নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের আন্তর্জাতিক বিষয়ক ডেপুটি কমিশনার দিলীপ চৌহান হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসবকে সকল বাংলাদেশির মিলনমেলা হিসেবে অভিহিত করেন। দিলীপ চৌহান বলেন, নিউইয়র্ক সিটি সকল ধর্মের মানুষের কর্মকান্ড অবাধে চলতে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে। আর এভাবেই এই সিটির সামাজিক-মর্যাদা ক্রমে সমৃদ্ধ হচ্ছে।
এ পূজা-অর্চনা শুরুতে কম্যুনিটি লিডার অধ্যাপক নবেন্দু বিকাশ দত্ত বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে মানবজাতিকে ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ করতে, বিশ্ব মানবতা জাগরণে, বিশ্ব কল্যাণে অসুর শক্তিকে পরাভূত করে শুভ, সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠিত করতে দুর্গাপূজা আজ বিশ্বনন্দিত।
তিনি উল্লেখ করেন, দুর্গাপূজা ইউনেস্কোর বিশ্ব-মানবতার অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে নিবন্ধিত। উৎসবমুখর দুর্গাপূজার এই মন্ত্র অতীত থেকে আমরা ধারণ করেছি। আগামীতেও এই ধারা বহমান থাকবে আর এভাবেই দুর্গাপূজার ঐতিহ্য বিশ্ব মানবতা জাগরণে, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সকলকে উদ্বুদ্ধ করবে। এই অর্জনে আমরা গর্বিত, গর্বিত সকল সনাতনী হিন্দু।
এরপরই একুশে পদকপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় ভক্তিমূলক গান পরিবেশনের পর উলুধ্বনির মধ্যদিয়ে আয়োজনটি শুরু হয়।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক অঞ্চলে এবার বাংলাদেশী হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্যোগে ৩২টি পূজামণ্ডপ হয়। সবগুলোতে সকল ধর্মের প্রবাসীর বিপুল সমাগম ঘটেছিল। পূজা-প্রাঙ্গণে এসে বাঙালিদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এসব ঘটনার প্রশংসা করেছেন কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং, স্টেট এ্যাসেম্বলীওম্যান ক্যাটলিনা ক্রুজ-সহ সিটি মেয়র এরিক এডামস এবং অন্য জনপ্রতিনিধিরা।