রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন

যে পাপ করলে আল্লাহ রাগান্বিত হন

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৭৫ বার

মু’মিন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অনেক গুনাহ করে থাকে। যেমন- কবিরা, সগিরা, বিদয়াত ইত্যাদি। এসব গুনাহের মধ্যে যে গুনাহ আল্লাহ তায়ালাকে সর্বাধিক ক্রোধান্বিত করে ও যার ফলে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়, তা হলো জিনা-ব্যভিচার। বর্তমানে সারা বিশ্বে জিনা-ব্যভিচার এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে, মানুষ একে পাপই মনে করছে না। এর মূল হচ্ছে বেপর্দা ও আল্লাহর ভয় অন্তর থেকে উঠে যাওয়া। আল্লাহ তায়ালার কাছে এ কাজ সবচেয়ে ঘৃণিত, নিন্দনীয় ও মহাপাপ।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, কোনো জাতির মধ্যে আত্মসাৎ করা বৃদ্ধি পেলে সে জাতির লোকদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করা হয়। কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়লে সেখানে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা পরিমাপ ও ওজনে কম দিলে তাদের রিজিক সঙ্কুচিত করা হয়। কোনো জাতির লোকেরা অন্যায়ভাবে বিচার-ফায়সালা করলে তাদের মধ্যে রক্তপাত বিস্তৃতি লাভ করে। কোনো জাতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আল্লাহ শত্রুদেরকে তাদের ওপর চাপিয়ে দেন। (মুয়াত্তা মালেক-১৩২৩)

রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘হে মুহাম্মদের উম্মতগণ! আল্লাহর শপথ! আল্লাহ অপেক্ষা রাগী আর কেউ নেই, তিনি রাগ হন তাঁর সেই বান্দা-বান্দীর প্রতি যে ব্যভিচার করে। হে মুহাম্মদের উম্মতগণ! আল্লাহর শপথ, আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে, তা হলে অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশি বেশি কাঁদতে।’ (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, মিশকাত-১৪৮৩) মহানবী সা: বলেছেন, সপ্ত আকাশ ও সপ্ত জমিন বিবাহিত ব্যভিচারীর প্রতি অভিসম্পাত করে। জাহান্নামে এদের লজ্জাস্থান থেকে এমন দুর্গন্ধ বের হবে, যা জাহান্নামিরাও সহ্য করতে পারবে না। আগুনের আজাবের সাথে সাথে জাহান্নামে তারা লাঞ্ছনাও ভোগ করবে। (বাজজাজ) আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘ব্যভিচারী কোনো ব্যভিচারিণীকে অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে বলো ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষকেই বিয়ে করে এবং এদেরকে মু’মিনদের জন্য হারাম করা হয়েছে।’ (সূরা আন নূর-৩) তবে ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী যদি তাওবাহ করে ফিরে আসে, তাহলে মু’মিন ও মু’মিনাদের সাথে তাদের বিয়ে বৈধ হবে। ব্যভিচারের শাস্তি ভয়ানক। হাদিস শরিফে রয়েছে- ব্যভিচারের মন্দ পরিণাম ছয়টি। তিনটি দুনিয়ায়, আর তিনটি আখিরাতে।

দুনিয়ার তিনটি হলো- ১. সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া; ২. দারিদ্র্য; ৩. অকাল মৃত্যু। আর আখিরাতের তিনটি হলো- ১. আল্লাহর অসন্তুষ্টি; ২. হিসাব-নিকাশের কঠোরতা এবং ৩. জাহান্নামের কঠিন শাস্তি। (ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ, ই. ফা-১০৯) আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। কারণ, তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সূরা বনি ইসরাইল-৩২) রাসূলুল্লাহ সা: বলেন- ‘কোনো বান্দা যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন তার ভেতর থেকে ঈমান বেরিয়ে যায় এবং এটি তার মাথার উপর মেঘখণ্ডের মতো ভাসতে থাকে। অতঃপর সে যখন তাওবাহ করে, তখন ঈমান পুনরায় তার কাছে ফিরে আসে।’ (সূনানে আবু দাউদ, কিতাবুস সুন্নাহ, হাদিস নং-৪৬৯০)

তিনি আরো ইরশাদ করেন- ‘যে ব্যক্তি ব্যভিচার করে বা শরাব পান করে, আল্লাহ তার উপর থেকে ঈমান ছিনিয়ে নিয়ে যান, যেভাবে মানুষ মাথার দিক দিয়ে জামা খুলে নেয়।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম- ১ : ২২) ফিরাউনের সলিল সমাধি ও মুসা আ:-এর মিসর জয়ের পর আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মূসা আ: যখন বনি ইসরাইলকে ‘জাব্বারিন’ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করার হুকুম করেন তখন জাব্বারিন সম্প্রদায় বালআম ইবন বাউরার কাছে সমবেত হয়ে বলল, মূসা আ: অতি কঠিন লোক, তদুপরি বিরাট বাহিনী নিয়ে এসেছে, তারা আমাদিগকে দেশ থেকে বের করে দেবে। আপনি তার বিরুদ্ধে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করুন, যাতে তাকে ফিরিয়ে নেয়। বালআম ছিল একজন বড় আবেদ, তার যেকোনো দোয়া কবুল হতো। সে প্রথমে নবীর বিরুদ্ধে দোয়া করতে রাজি হয়নি। পরবর্তী সময়ে তার স্ত্রীকে লোভনীয় উপঢৌকন দিয়ে তারা দোয়া করতে বাধ্য করল। সে যত দোয়া করছে তার দোয়া মূসা আ: ও তাঁর বাহিনীর পক্ষে এবং জাব্বারিনের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, আর বালআমের জিহ্বা মুখ থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। বালআম যখন বুঝতে পারল, তার দোয়া বিফল হচ্ছে, তখন সে তাদের একটি পরামর্শ দিলো, তোমাদের সুন্দরী নারীদের মূসা আ:-এর সেনাদের মধ্যে পাঠিয়ে দাও। আর এর ফলে তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হবে এবং তারা আল্লাহর গজবে পতিত হয়ে ধ্বংস হবে। জাব্বারিন তাদের সুন্দরী নারীদের বনি ইসরাইলদের মধ্যে পাঠিয়ে দিলে তাদের একজন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আর এর ফলে তাদের মধ্যে কঠিন প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ে এবং এক দিনে ৭০ হাজার বনি ইসরাইল মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

বর্তমানে পৃথিবীতে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নিষিদ্ধ সব কার্যকলাপ অহরহ হচ্ছে। মুসলিম-অমুসলিম কেউই ছোট থেকে পড় পাপ করতে দ্বিধাবোধ করছে না। তারপরও পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মতো কেন প্রাকৃতিক মহাদুর্যোগ আসছে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা সূরা আনফালের ৩৩ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন- ‘দু’টি কারণে প্রাকৃতিক মহাদুর্যোগ আসছে না, একটি হলো মহানবী সা: তাদের মধ্যে বিদ্যমান আছেন তথা তার নবুয়ত চলছে, আর দ্বিতীয়টি হলো- এমন কিছু খাঁটি বান্দা রয়েছে, যারা সদা ইসতিগফার করে। বর্তমানে করোনাভাইরাস মানবের হস্ত অর্জিত কর্মের ফল। মানবের পাপাচারের কারণে বিশেষ করে জিনা-ব্যভিচার ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হয়ে এ দুর্যোগ ও মহামারী দিয়ে কষ্ট দিচ্ছেন।

লেখক : প্রধান ফকিহ, আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com