মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন

নতুন শিক্ষাক্রমে প্রশিক্ষণের বাইরে সাড়ে ৭ লাখ শিক্ষক

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ১২৮ বার

চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে চারটি শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হলেও এখনো প্রশিক্ষণের বাইরে সাড়ে সাত লাখ শিক্ষক। যদিও আজ শুক্রবার থেকে মাধ্যমিকে পর্যায়ের শিক্ষকদের নিয়ে পাঁচ দিনের স্বশরীরে প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। কিন্তু এই প্রশিক্ষণেও বাদ পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সাত লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরে প্রাথমিকে দুই শ্রেণী এবং মাধ্যমিক স্তরের দুটি শ্রেণী মিলে মোট চারটি শ্রেণীতে নতুন পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয় এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন পাঠ্যসূচি সংযোজন করা হয়েছে। কিন্তু নতুন এই পাঠ্যসূচি পাঠদানের জন্য গত বছর থেকেই শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রথমে অনলাইনে এই প্রশিক্ষণ শুরু করার কথা থাকলেও নানা জটিলতার কারণে সেটাও ফলপ্রসূ হয়নি। এখন জেলা ও উপজেলা পর্যায় আজ থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে।

এদিকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার পর শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু করার ফলে এর কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য সব শিক্ষককেও এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। সূত্র জানায়, দেশে এখন সরকারি ও বেসরকারি মিলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক লাখ ১৮ হাজার ৮৯৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের সংখ্যা ৬ লাখ ৫৭ হাজার ১৯৩ জন। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৬ টি এবং শিক্ষকের সংখ্যা তিন লাখ ৬০ হাজার। অপরদিকে সরকারি তথ্যমতেই দেশে এখন বেসরকারি বা কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ২৮ হাজার ১৯৩টি। এখানে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। আজ থেকে শুরু হওয়া শিক্ষক প্রশিক্ষণে বাইরে থাকছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ৭ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষক।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবি সূত্র জানায়, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ পেতে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। আজ শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। এদিন ছাড়াও ৭ জানুয়ারি (শনিবার), ১৩ জানুয়ারি (শুক্রবার), ১৪ জানুয়ারি (শনিবার) এবং ১৫ জানুয়ারি (রোববার) নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন সদ্য প্রশিক্ষণ পাওয়া মাস্টার ট্রেইনাররা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখার পরিচালক ও ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিমের পরিচালক অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাটার্য জানান, পাঁচ দিন ৪০৮টি উপজেলা ও ২৫টি থানায় প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়েছে। এতে ২ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক অংশ নেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, প্রথমে ৬, ৭, ১৩, ১৪ ও ২০ জানুয়ারি প্রশিক্ষণ পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হলেও পরে একদিনের প্রশিক্ষণের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০ জানুয়ারি প্রশিক্ষণ ১৫ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক ও উপপরিচালকদের প্রধান অতিথি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রতিদিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলবে। দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজ ও নামাজের বিরতি এক ঘণ্টা এবং ১৫ মিনিট করে দুই দফায় মোট ৩০ মিনিটের রিফ্রেশমেন্টের বিরতি থাকবে। সরকারি বিধি মোতাবেক ভ্যাট এবং কর কর্তন করে সব প্রশিক্ষণার্থীদের দুপুরের খাবারের টাকা নগদ দেয়া হবে।

সূত্র জানায়, নতুন পাঠ্যক্রমকে সহজভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থাপন করার জন্য চার লাখেরও বেশি শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিতে ১৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। শিক্ষকদের নতুন কারিকুলামে অভিজ্ঞ করে বিষয়ভিত্তিক অনলাইন ও অফলাইন- এই দুই ধরনের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এ প্রকল্পে। এরই মধ্যে প্রকল্পের অধিকাংশ অর্থ ব্যয় হলেও তার ফল তলানিতে। কারণ অধিকাংশ শিক্ষক এখনো নতুন শিক্ষাক্রমের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পাননি। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, মাধ্যমিকের প্রায় ৮৬ হাজার শিক্ষক এখনো অনলাইন প্রশিক্ষণ নিতে পারেননি। প্রাথমিকস্তরে এ প্রশিক্ষণ এখনো শুরুই হয়নি। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো নতুন কারিকুলামে পড়ালেও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে অধ্যাপক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য জানান, মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট ১৮ হাজার ৮২৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫২৮ জন শিক্ষক সরাসরি প্রশিক্ষণ পাবেন। কলেজ সংযুক্ত ২ হাজার ৯৭৩টি বিদ্যালয়ের মোট এক লাখ এক হাজার ৪৭৮ জন শিক্ষককেও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এ ছাড়া সরাসরি প্রশিক্ষণের আওতায় রয়েছেন ৬৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত প্রায় ৬ হাজার মাধ্যমিকের শিক্ষক।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি মো: মিজানুর রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, দেশে এখন ৩০ হাজারের বেশি কিন্ডারগাটেন রয়েছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক আছেন। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে যেহেতু সরকারিভাবে দেয়া পাঠ্যপুস্তকই পড়ানো হয় তাই সেখানে শিক্ষার্থীদের পাঠদানকে সহজ করতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ জরুরি। এই বড় সংখ্যার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বাইরে রেখে নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী সঠিকভাবে পাঠদান সম্ভব হবে না। তাই কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদেরও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com