রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ পূর্বাহ্ন

ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ২৫৮ বার

বেক্সিট নিয়ে প্রায় চার বছরের অনিশ্চয়তায় নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল ব্রিটেনের অর্থনীতি, বিচলিত করে তুলেছিল বিনিয়োগকারীদের। অবশেষে গত শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে ৪৭ বছরের সম্পর্কের ইতি টেনেছে ব্রিটেন। তবে এর মধ্য দিয়ে দেশটির অর্থনীতি লাভবান হবে কি না তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ব্রেক্সিট-পরবর্তী রূপান্তরকালীন ১১ মাসের মধ্যে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে দেশটির বড় অর্থনৈতিক সহযোগীদের সাথে নতুন বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে তৎপর হতে হবে। এ বিষয়ে ব্যর্থ হলে এরই মধ্যে চাপে থাকা ব্রিটেনের অর্থনৈতিক সঙ্কট আরো ঘনীভূত হবে।

চার দশক ধরে ইইউর মতো শক্তিশালী বাণিজ্য গোষ্ঠীর সাথে থাকার পর ব্রিটেনকে এখন নিজেকেই নিজের পথ চলতে হবে। এ পরিক্রমায় প্রথমেই দেশটিকে ঠিক করতে হবে ইইউর সাথে সম্পর্কের সম্ভাব্য রূপরেখা। ব্রিটেনের রফতানি পণ্যের প্রায় অর্ধেকের ক্রেতা ইইউ হওয়ায় এ সম্পর্কের ওপর বহুলাংশে নির্ভর করছে দেশটির ভবিষ্যৎ অর্থনীতির ভাগ্য। তবে বরিস জনসন আর শুধু ইইউমুখী থাকতে চচ্ছেন না। একই সাথে তিনি বিশ্বের অন্য সব শক্তিশালী দেশ, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও নতুন বাণিজ্য চুক্তির জন্য মুখিয়ে আছেন। তবে এ ক্ষেত্রে বিপদ হলো, ব্রিটেন যত বেশি ইইউ থেকে দূরে সরবে, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো প্রতিবেশী দেশের সাথে বাণিজ্যের বিষয়ে দেশটিকে তত বেশি সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তার কারণে বহু ব্রিটিশ কোম্পানি এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে নতুন করে কোনো ধরনের বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা সামাল দেয়ার মতো অবস্থা তাদের নেই। তা ছাড়া ব্রিটেনের বর্তমান অনভিজ্ঞ আলোচনাকারী দল ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সফলতার সাথে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ব্রিটেনের সাবেক এক রাষ্ট্রদূত কিম ডারোচ বলেন, ৪০ বছর ধরে আমরা তেমন কোনো বাণিজ্য আলোচনা করিনি। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য আলোচনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। সত্যি কথা হলো, এ বিষয় নিয়ে কাজ করার মতো সক্ষমতাই আমাদের নেই।

এ দিকে ব্রেক্সিট-পরবর্তী ১১ মাসে ইইউর সাথে ব্রিটেনের বাণিজ্য সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হবে না। জনসন এ সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য আবেদন জানাতে পারলেও তিনি তা করবেন না বলে বারবার নিশ্চিত করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে হিসেবে কোনো ধরনের ভুল হলে ব্রিটেনের জন্য বিপদ বাড়বে। কারণ নির্ধারিত এ সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ব্রিটেন ব্রাসেলসের সাথে নতুন বাণিজ্য চুক্তি না করলে দেশটিকে বড় ধরনের বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হবে। আর এ বিষয়টি নিয়েই দীর্ঘ দিন ধরে ভয়ের মধ্যে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। একই সাথে ব্রেক্সিটের ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিণতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন এয়ারবাস ও নিশানের মতো কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা।

ব্রেক্সিট-পরবর্তী ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে ব্রিটেনে বিনিয়োগকারী বিভিন্ন মার্কিন কোম্পানি। ব্রিটেনে এসব কোম্পানির বিনিয়োগের পরিমাণ ৭৫ হাজার বিলিয়ন ডলারের বেশি। একই সাথে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১৫ লাখ ব্রিটিশ নাগরিক। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বরিস জনসন যে শিগগিরই কোনো বাণিজ্য চুক্তি করতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ এরই মধ্যে ব্রিটেনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। এ অবস্থায় ভালো মুনাফার নিশ্চয়তা ছাড়া দেশটি নতুন করে ব্রিটেনে আরো অর্থ বিনিয়োগ করবে না বলেই মনে হচ্ছে।

ব্রিটেন-ইইউ বিজনেস কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক মার্জরি চরলিনস এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা ইইউ ও ব্রিটেন কর্তৃপক্ষকে তাদের মধ্যকার চুক্তির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছি। যাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারী ও রফতানিকারকদের কাছে পরিস্থিতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এর মধ্য দিয়ে তারা তাদের ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধির পাশাপাশি আরো চাকরি সৃষ্টির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে। তার মতে, যত দিন ব্রিটেন ও ইইউর মধ্যকার চুক্তির চূড়ান্ত পরিণতি না আসে, তত দিন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সময় বৃদ্ধি করা উচিত। সূত্র : সিএনএন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com