সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন

চলতি বছর হবে এলনিনুর, বৃষ্টি কম গরম ও ঝড় বাড়তে পারে

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ১২৯ বার

চলতি ২০২৩ সালটি হতে পারে এল নিনুর বছর। ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এর প্রভাবে বৃষ্টি কম হতে পারে, বাড়তে পারে তাপ ও ঝড়ের পরিমাণ। কোনো কোনো গবেষণায় বলা হচ্ছে, অত্যধিক তাপ এবং খরায় বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়বে। ২০২২ সালে প্রশান্ত মহাসাগরে যে লা নিনা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল চলতি ২০২৩ সালে তা দুর্বল হবে।

গবেষণায় বলা হচ্ছে, আগামী ২০২৪ সালে এল নিনুর কারণে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বেড়ে যাবে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। সাধারণত এল নিনু শেষ হওয়ার সাথে সাথে লা নিনার গঠন শুরু হয়। এল নিনু হলে খরা বা অনাবৃষ্টি আসবে এমন ইঙ্গিত দেয়। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর প্রভাবে ভারত মহাসাগর, ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া বরাবর ভূপৃষ্ঠে চাপ বাড়ে। তাহিতি এবং পূর্ব ও মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের বায়ুচাপ কমে। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ট্রেড উইন্ড বা এক দিক থেকে অন্য দিক বায়ুর আসা-যাওয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। পেরুর কাছে গরম বাতাস ঘনিভূত হওয়ার কারণে পেরুর উত্তরের মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। অপরদিকে ভারত এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর থেকে উষ্ণ বায়ু ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে। এই বায়ু সাথে করে নিয়ে যায় প্রচুর জলীয় বাষ্প। ফলে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল খরায় পুড়তে থাকে এবং বিপরীত দিকে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।

এল নিনু বা লা নিনা চক্রে বাংলাদেশের জলবায়ু খুবই সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা বেসিনে সাউদার্ন ওসিলেশন ইনডেক্স (এসওই) ও বৃষ্টিপাতের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক দেখা যায় বাংলাদেশের শুষ্ক মৌসুমে। কারণ এল নিনু বছরে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত কমে খরাপীড়িত অবস্থায় পড়ে যায়। আগে থেকেই এসওআই বছর জেনে এল নিনু বা লি নিনা ভিত্তিক আপদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রম জোরদার করা যায় বলে জলাবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন।

গত ৫০ বছরে ১৯৬৩-৬৪, ৬৫-৬৬, ৬৯-৭০, ৭২-৭৩, ৭৬-৭৭, ৭৭-৭৮, ৮২-৮৩, ৮৬-৮৭, ৯১-৯৫, ৯৭-৯৮, ২০০২-২০০৩, ০৪-০৫, ০৬-০৭ এবং ২০০৯ সালটি ছিল এল নিনুর বছর। এ বছরগুলোতে বাংলাদেশে অনাবৃষ্টি অবস্থা ছিল।

জলবায়ু বিজ্ঞানী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এএসইউ স্কুল অব সাসটেইবেল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড দ্য বিল্ট এনভায়রনমেন্টের এডজাঙ্ক প্রফেসর ড. রাশেদ চৌধুরী এল নিনু ও লা নিনা সম্বন্ধে বলেন, বর্তমানে লা নিনা দুর্বল হচ্ছে এবং এ প্রক্রিয়াটির দুর্বল হওয়া মানে এল নিনু-সাউদার্ন ওসিলেশান (ইএনএসও) নিরপেক্ষ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। এই ট্রানজিশান পিরিয়ডে (লা নিনা থেকে দুর্বল লা নিনা এবং দুর্বল লা নিনা থেকে ইএনএসও নিউট্রাল হচ্ছে)। আগের বছরগুলোতে বেশ কিছু ঝড় অথবা বেশ কয়েকটি নিম্নচাপ লক্ষ্য করা গিয়েছিল বাংলাদেশে। যেমন ২০০৯ সালে ২৭ মে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় আইলা ১১০ কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশে আঘাত করে। এটা হয়েছিল লা নিনা থেকে ইএনএসও নিরপেক্ষ হওয়ার সময়। আবার ২০০৯ সালের ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিল আরেকটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় বিজলী আঘাত হেনেছিল ৯০ কিলোমিটার বেগে। এটা হয়েছে লা নিনা থেকে এনসো নিউট্রাল ট্রানজিশনের সময়।

রাশেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ঝড়ের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এল নিনু বছরগুলোতে ঝড়ের মাত্রা বেড়ে যায়। ১৯৬৩ সালের নোয়াখালী-কক্সবাজার উপকূলে, ১৯৭০ সালে ভয়াল ভোলা ঝড়, ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে ঝড়, ১৯৯১ সালের এপ্রিলের ঝড়, ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী সিডর হয়েছিল এল নিনুর প্রভাবে।

এল নিনু সম্বন্ধে কানাডার সাসকাচওয়ান ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমেরিকা, ইউরোপিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা পূর্বাভাস করেছে যে ২০২৩ সালে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো অবস্থা সৃষ্টি হবে’। তিনি বলেন, ‘এল নিনো বছরগুলোতে বর্ষাকালে বাংলাদেশ ও ভারতের উপরে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয় ও গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। এল নিনো বছরগুলোতে তাপ প্রবাহের ঘটনা ও দিনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com