প্রথমে মানসিক সম্পর্ক, এর পর শারীরিক। এরও পরে গর্ভে আসে সন্তান। প্রেমিক মো. ফিরোজকে পারুল (ছদ্মনাম) জানান, তার শরীরে বেড়ে উঠছে তাদের ভালোবাসার ফসল। ২০১৩ সালের ১৯ জানুয়ারি পারুলকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান ফিরোজ। কিন্তু ফিরোজদের পরিবারের সদস্যরা নির্যাতন করে পারুলকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এমতাবস্থায় ওই বছরেরই ২৬ জানুয়ারি তেঁতুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় মামলা করেন পারুল।
২০১৩ সালে মামলার বিচার চলাকালেই পারুল একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। নবজাতকের নাম রাখা হয় ফরিদা। আদালতের নির্দেশে ২০১৪ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডিএনএ টেস্ট করে দেখা যায়, ফিরোজেরই ঔরশজাত শিশু ফরিদা। ২০১৫ সালে পঞ্চগড়ের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এ মামলার বিচার শেষে ফিরোজকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাস কারাদণ্ড দেন।
এ ছাড়া কন্যাসন্তান ফরিদার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত প্রতি মাসে এক হাজার টাকা ভরণ-পোষণ বাবদ দেওয়ার জন্য ফিরোজের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে ফিরোজ ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই হাইকোর্টে আপিল করেন।
এই বিচারাধীন আপিলের সঙ্গে করা একটি জামিনের আবেদন সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। গত ১৬ জানুয়ারি বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের বেঞ্চে এই আসামির জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়।
শুনানিকালে আদালত বলেন, মেয়েটির সঙ্গে ফিরোজের বিয়ে দেওয়া হলে আসামি ফিরোজ জামিন পাবেন। ফিরোজের আইনজীবী মো. আবুল কালাম জানান, তার মক্কেল আদালতের প্রস্তাবে সম্মত আছেন। পরে আদালত আসামি ফিরোজকে ৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে হাজির করতে পঞ্চগড়ের জেল সুপারকে নির্দেশ দেন।
এ ছাড়া তার অভিভাবক, পারুল ও তার অভিভাবক, তাদের মেয়ে শিশুসন্তান ফরিদাকে একজন কাজীসহ হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ৯ ফেব্রুয়ারি আসামি ফিরোজকে হাইকোর্টের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। হাজির হন ফিরোজ ও পারুলের অভিভাবকরা। কন্যাসন্তানটিকেও সেদিন আনা হয় হাইকোর্টে। সবাই হাজির হলে আদালত ফিরোজ ও পারুলের বিয়েতে কোনো আপত্তি আছে কিনা জানতে চান। তখন কোনো আপত্তি নেই জানিয়ে সম্মতি দিলে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে হাইকোর্টের কাঠগড়ায় বসেই বিয়ে করে পারুলকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দেন ফিরোজ।
এর পর আদালত ফিরোজকে এক বছরের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফজলুর রহমান (এফআর) খান এবং আসামি ফিরোজের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আবুল কালাম।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এফআর খান বলেন, সব পক্ষের মতামত নিয়েই হাইকোর্ট এ বিয়ে দিয়েছেন। এর পর এক বছরের জন্য জামিন দিয়ে আদালত এই আসামিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। এই এক বছর তাদের সম্পর্ক ঠিকমতো থাকলে পরে তার জামিন বহাল রাখার বিষয়টি আদালত বিবেচনা করবেন। আর সম্পর্ক ঠিকমতো না চললে আসামির জামিন বাতিল করা হবে।
এ বিয়ে নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রাষ্ট্রের এই আইন কর্মকর্তা বলেন, আদালতের উদ্যোগটা বেশ প্রশংসনীয়। কাঠগড়ায় এনে বিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মেয়েটির সম্পর্ক বৈধতা পেল। সবচেয়ে বড় কথা সন্তানটি পেল তার বাবা-মাকে। এ ছাড়া ছেলেটিও সেই ২০১৩ সাল থেকেই কারাগারে রয়েছেন। সেও এখন কারামুক্তি পাবেন।
এফআর খান আরও জানান, বিয়ে দেওয়ার পর আসামি ফিরোজকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাকে আবারও পঞ্চগড়ের কারাগারে নেওয়া হয়েছে। এখন হাইকোর্টের জামিনের আদেশটি পঞ্চগড়ের আদালতে পাঠানো হবে। সেখানে বেল বন্ড দাখিলের পর মুক্তি পাবেন ফিরোজ। চলতি সপ্তাহেই এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং ফিরোজ কারামুক্ত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।