রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫২ অপরাহ্ন

ভূমিকম্প ও কম্পিত হৃদয়ের ফরিয়াদ

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১ মার্চ, ২০২৩
  • ১১০ বার

ভূমিকম্প মহান আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে জগতের মানুষের প্রতি সতর্কতা ও পরীক্ষা। বিশ্বাসীরা এটিকে আজাব বা গজব বলে মনে করেন। আর অবিশ্বাসীরা এটিকে প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়া কিংবা প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে অভিহিত করেন। জলে-স্থলে যত বিপদাপদ আপতিত হয় এর পেছনেই মানুষের কৃতকর্ম তার জন্য দায়ী। আল্লাহ পাক বিনা কারণে কারো ওপর আজাব ও গজব চাপিয়ে দেন না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন, ‘জলে-স্থলে যে বিপর্যয় (মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ) তা মানুষের কৃতকর্মের ফল। যার ফলে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা (আল্লাহর পথে) ফিরে আসে।’ (সূরা রুম, আয়াত-৪১) তিনি আরো বলেন, ‘যে বিপদাপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।’ (সূরা শুরা-৩০)
মানুষ যখন আল্লাহর নির্দেশনা উপেক্ষা করে দাম্ভিক হয়ে চলতে থাকে, গজব নিশ্চিত ও ত্বরান্বিত করে এমন পাপ কাজে সদা লিপ্ত থাকে, এমন অবস্থায় আল্লাহ পাক তাদেরকে আজাব ও গজব দিয়ে সতর্ক ও পরীক্ষা করেন। ‘আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলদেরকে, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’ (সূরা বাকারাহ : ১৫৫-১৫৭)

নির্বোধ লোকদের সতর্ক করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জনপদের অধিবাসীরা কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমার আজাব (নিঝুম) রাতে তাদের কাছে আসবে না, যখন তারা (গভীর) ঘুমে (বিভোর হয়ে) থাকবে!’ (সূরা আরাফ-৯৭)

আজাব ও গজবের কারণ : মহান আল্লাহ খুবই সহনশীল। তাঁর অন্যতম সিফাত হলো তিনি ‘হালিম’। হালিম সিফাতের বৈশিষ্ট্য এমন যে, যিনি সহজে কারো ওপর প্রতিশোধ নেন না। যিনি ক্ষমার সুযোগ দেন, সতর্ক করেন, দয়া করেন। আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে কখনোই স্বপ্রণোদিত হয়ে আজাবে নিপতিত করেন না; বরং মানুষ নিজেরা নিজেদের বিপদের মুখোমুখি করে, বিপদে আক্রান্ত হয়। আল্লাহ পাক নবী-রাসূল এবং নাজিলকৃত আসমানি কিতাবের মাধ্যমে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যারাই সীমালঙ্ঘন করবে আমি তাদের শাস্তিতে নিপতিত করব। আল্লাহ পাক বলেন, ‘যে কেউ সীমালঙ্ঘন করবে আমি তাকে শাস্তি দেবো, এরপর সে তার প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে এবং তিনি তাকে কঠিন শাস্তি দেবেন।’ (সূরা কাহাফ-৮৭)

জমিনে আজাব ও গজবের কারণ সম্পর্কে রাসূল সা: হাদিস বর্ণনার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে এ মর্মে সতর্ক করেছেন যে, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে কিন্তু তার খিয়ানত করা হবে, জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে কিন্তু মায়ের সাথে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নিয়ে পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে, মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে শোরগোল হবে, জাতির সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হবে নেতা, একজন মানুষ যেকোনো খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে, তাকে তার খারাপ কাজের ভয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হবে, বাদ্যযন্ত্র ও নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হবে, মদপান করা হবে, লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষগুলোকে অভিশাপ দেবে, এমন সময় তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে এবং এমন একটি ভূমিকম্প হবে যা সেই ভূমিকে তলিয়ে দেবে।’ (তিরমিজি-১৪৪৭)

গাফেলদের পরিণতি : মহান আল্লাহ মানুষকে বিপদ থেকে বেঁচে থাকতে সতর্ক করেন এবং নবী-রাসূলদের মাধ্যমে সতর্ক করান। নবী-রাসূল পরবর্তী যুগে উম্মতের শ্রেষ্ঠ সন্তান ওলামায়ে কেরামের মাধ্যমে সতর্কতা জারি রাখেন। মানুষ যখন নসিহামূলক এ সতর্কতাগুলো উপেক্ষা করে অহমিকা প্রদর্শন করে, জুলুম করে, অন্যায় ও পাপাচারে দ্বিধাহীন চিত্তে লিপ্ত হয়ে যায়, তখন মহান আল্লাহ তাদেরকে সাময়িক লঘু শাস্তির সম্মুখীন করান। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন- ‘যদি জনপদের মানুষগুলো ঈমান আনত এবং (আল্লাহকে) ভয় করত, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু তারা (আমার নবীকেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য আমি তাদের পাকড়াও করলাম।’ (সূরা আরাফ-৯৬) তিনি আরো বলেন, ‘জনপদের মানুষগুলো কি নির্ভয় হয়ে ধরে নিয়েছে যে, আমার আজাব তাদের ওপর মধ্য দিনে এসে পড়বে না? তখন তারা খেলতামাশায় মত্ত থাকবে। কিংবা তারা কি আল্লাহর কলাকৌশল থেকেও নির্ভয় হয়ে গেছে? অথচ আল্লাহর কলাকৌশল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত জাতি ছাড়া অন্য কেউই নিশ্চিত হতে পারে না।’ (সূরা আরাফ : ৯৮-৯৯)

কম্পিত হৃদয়ের ফরিয়াদ : ভূমিকম্প বা যেকোনো দুর্যোগ মানবতার বিনাশ করেই ছাড়ে। এ বিনাশ থেকে রক্ষা নেই পাপী কিংবা পুণ্যবান কারোরই। কেবল মহামহিমের বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়াই পারে আচানক বিপদ কিংবা মহাদুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে। সবার উচিত বালামুসিবত থেকে পরিত্রাণ পেতে রাব্বে কারিমের কুদরতি চরণে সিজদায় লুটিয়ে পড়া। আশা ও ভয়ের সংমিশ্রণে কম্পিত হৃদয়ে কায়োমনোবাক্যে পরোয়ারদিগারে আলমের কাছে এ ফরিয়াদ করা- ‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগজাবিকা, ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা, ওয়া আফিনা কাবলা জালিকা।’ অর্র্থাৎ- ‘হে আল্লাহ আমাদেরকে তোমার গজব দিয়ে মেরে ফেলো না, তোমার আজাব দিয়ে আমাদেরকে হত্যা করে দিও না, আর আমাদেরকে আজাব ও গজবের আগেই নিরাপত্তা দান করো।’

‘আল্লাহুম্মা ইদফা আন্নাল বালা ওয়াল বারাকিন ওয়াজ জিলযাল ওয়াল মিহান ওয়া জামিয়িল ফিতান মা জহারা ওয়ামা বাতান’। অর্থাৎ- ‘হে আল্লাহ আমাদের থেকে প্রকাশিত অপ্রকাশিত বিপদাপদ, আগ্নেয়গিরি, ভূমিকম্প, কষ্টকর জীবনসহ সব বিপর্যয় দূর করে দিন।’

এ দোয়া ছাড়াও বেশি বেশি ইস্তিগফার, তাওবাহ নাসুহা, জিকির আজকার, তাকবির তাহলিলের আমল করা। আমলের পাশাপাশি দোয়ার মাধ্যমে চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে মায়াবী কান্নায় যখন হৃদয় গলে যাবে তখনই মহান রবের অনুগ্রহের বদৌলতে ভূমিকম্পসহ সব দুর্যোগ থেকে মানুষ রক্ষা পেতে পারে।

লেখক :

  • মো: আবদুল গনী শিব্বীর

মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com