২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় নাজুক পরিস্থিতি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতের। ওই সংকটের পর ব্যর্থ হওয়া সব থেকে বড় ব্যাংক এখন ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি)। গত ৪০ বছর ধরেই সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছিল ব্যাংকটি। এমনকি গত বছরের শেষ দিকে এসেও এর সম্পদ ছিল ২০৯ বিলিয়ন ডলার! কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটির মূলধনের অবস্থা এতটাই নাজুক হয়েছিল যে, আর টিকে থাকতে পারলো না এসভিবি। শুক্রবার অব্যবস্থাপনার কারণে মূলধন সংকট হওয়ায় ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি)। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ব্যাংকটির পতনের কারণে বিভিন্ন কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার এখন আটকে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারাতে অবস্থিত ব্যাংকটি গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম বৃহত্তম ব্যাংক ছিল। যদিও প্রযুক্তি ফোকাসড ব্যাংকটির এই পতনের জন্য যতটা না তাদের অনিয়ম দায়ী, তার থেকে বেশি দায়ী মার্কিন ফেডের সুদের হার বৃদ্ধি। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এবং সমস্ত শাখা আগামী ১৩ই মার্চ পুনরায় খুলবে। এরপর সমস্ত বীমাকৃত আমানতকারীরা সোমবার সকালের পরে তাদের আমানতে সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস পাবে বলে জানিয়েছে এফডিআইসি। কিন্তু এফডিআইসি আরও জানিয়েছে যে, ব্যাংকের ১৭৫ বিলিয়ন ডলারের আমানতের মধ্যে ৮৯ শতাংশই বীমাহীন। ফলে তাদের ভাগ্য এখন ঝুলে আছে। এ নিয়ে এফডিআইসি’র এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে রয়টার্স। কিন্তু তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ব্যর্থতার জের ধরে অচিরেই আরও কয়েকটি ব্যাংকে তালা ঝুলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে অন্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও। এমন অবস্থার প্রভাব পড়েছে শেয়ার মার্কেটে। অর্থনৈতিক বিপর্যয় আরও দীর্ঘ হবে কিনা সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি সকলের। গোটাবিশ্বের অর্থনৈতিক সেক্টরেই এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেন, অস্থির হওয়ার কোনো কারণ নেই। ব্যাংকিং সিস্টেম তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে সক্ষম আছে। এসভিবি’র এই সংকটের শুরু হয় ২০২১ সালে। ওই বছর ব্যাংকটিতে প্রচুর আমানত আসতে শুরু করে। ২০১৯ সালে তাদের আমানত ছিল যেখানে মাত্র ৬১.৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেটি ২০২১ সালে বেড়ে ১৮৯.২০ বিলিয়নে পৌঁছে যায়। কিন্তু শুধু আমানত বৃদ্ধি পেলেই হবে না, ব্যাংকের মূল কাজ ঋণ প্রদান করা। এখানেই ব্যর্থ হয় এসভিবি। তারা অত দ্রুত ঋণ প্রদান করতে পারছিল না। এমন পরিস্থিতিতে হাতে থাকা মূলধন নষ্ট না করে এই আমানতের টাকা দিয়ে মর্টগেজ-ব্যাকড সিকিউরিটিজ বা এমবিএস কিনতে শুরু করে ব্যাংকটি। প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সিকিউরিটিজ কিনে ফেলে তারা। এসব সিকিউরিটিজের সময়কাল ছিল ১০ বছরের বেশি এবং গড় রিটার্ন ১.৫৬ শতাংশ। কিন্তু এরপর মার্কিন ফেড রেট বাড়তে শুরু করলে এসভিবি’র এই এমবিএস’র দাম কমে যায়। কারণ বিনিয়োগকারীরা এখন ফেড থেকে দীর্ঘমেয়াদি এবং ঝুঁকিহীন বন্ড কেনাতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সেখানে প্রায় নিশ্চিত ২.৫ গুণ রিটার্ন পাবেন তারা। এ কারণে এসভিবি’র তুলনামূলক কম রিটার্নের বন্ডগুলোর দাম কমে যায়। এদিকে রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, মার্কিন ব্যাংকগুলো গত দুইদিনে স্টক মার্কেট মূল্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। অপরদিকে ইউরোপীয় ব্যাংকগুলো প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্য হারিয়েছে। মার্কিন ঋণদাতা ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক এবং ওয়েস্টার্ন অ্যালায়েন্স শুক্রবার জানিয়েছে যে, তাদের তারল্য এবং আমানত শক্তিশালী রয়েছে। তারা তাদের শেয়ারের পতন ঠেকাতে বিনিয়োগকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করছে।
এ জাতীয় আরো খবর..