দেশের কোথাও কোনো দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠনের রেওয়াজ রয়েছে। সাধারণত দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও উদ্ঘাটনের পর একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে তদন্ত কমিটি তাদের পর্যবেক্ষণ, সুপারিশ ও মূল্যবান মতামতগুলো প্রতিবেদন আকারে প্রদান করে থাকে।
তবে হতাশাজনক হলো, দেশে গ্যাস ও বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনাসহ অগ্নি, নৌ, সড়ক এবং বিভিন্ন অবকাঠামোগত দুর্ঘটনার পরপরই তদন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ বা তোড়জোড় লক্ষ করা গেলেও পরবর্তী সময়ে কমিটির সুপারিশ-মতামতগুলো আমলে নিয়ে তা বাস্তবায়নের আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় না।
যেমন, ২০২১ সালের ২৭ জুন রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এলাকায় তিতাস গ্যাসের বিচ্ছিন্ন করা একটি সংযোগস্থলে গ্যাস জমে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ১২ জন নিহত হওয়ার পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ২৬ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছিল, যার মধ্যে সাধারণ মানুষের জন্য ১৪ দফা, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের জন্য আট দফা, ওয়াসার জন্য তিন দফা ও রাজউকের জন্য তিন দফা সুপারিশ ছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, প্রায় দুই বছরেও বেশিরভাগ সুপারিশই বাস্তবায়ন হয়নি।
তদন্ত কমিটির সুপারিশ আমলে না নেওয়ার পরিণতি কতটা মারাত্মক হতে পরে, সম্প্রতি রাজধানীর সায়েন্সল্যাব ও সিদ্দিকবাজারে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
প্রতিবছর দেশে অন্তত ৯ লাখ গ্যাস ও বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা ঘটছে। তারপরও সুরক্ষার বিষয়ে যত্নবান হচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। সচেতনতা, সাবধানতা ও দায়িত্বশীল হওয়ার মাধ্যমে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হলেও হতাশাজনক হলো, ব্যবহারকারী হিসাবে আমরা যেমন সচেতন নই; তেমনি নজরদারির ক্ষেত্রেও সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চরম উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব কারণে দুর্ঘটনার হার ক্রমেই বাড়ছে। তাই প্রশ্ন, সুপারিশ আমলে নেওয়া না হলে কোনো দুর্ঘটনার পর ঘটা করে তদন্ত কমিটি গঠনের কী প্রয়োজন?
আশঙ্কার বিষয় হলো, আসন্ন গ্রীষ্মে গ্যাস ও বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা আরও বাড়তে পারে। স্যুয়ারেজ লাইন, গ্যাস সংযোগ, অপরিকল্পিত ভবন ইত্যাদি কারণে বিস্ফোরণের ঝুঁকি রয়েছে। কাজেই অতীতে বিভিন্ন তদন্ত কমিটি এ সংক্রান্ত যেসব পর্যবেক্ষণ, মতামত ও সুপারিশ প্রদান করেছে, তার আলোকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এ ব্যাপারে উদাসীনতা ও দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ নেই, কারণ এর সঙ্গে মানুষের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষার প্রশ্ন জড়িত।