শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন

নারীর ক্যানসার নিয়ে বিভ্রান্তি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১
  • ১৭৫ বার

‘ক্যানসার আগে থেকে বোঝা যায় না, আকস্মিকভাবে ধরা পড়ে’- এ ধারণার ভিত্তি নেই। যথাযথ স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসার হওয়ার আগেই রোগ ধরা পড়তে পারে। নারীদের ক্যানসার নিয়ে রয়েছে নানা রকম বিভ্রান্তি। প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা হলো- অনেকে মনে করেন, স্তন ক্যানসার শুধু মায়ের দিককার আত্মীয় বা মা-খালা-নানি থেকে বংশানুক্রমে হতে পারে। এমন ধারণা ঠিক নয়। বাবার দিক থেকেও বংশানুক্রমে এ রোগ হতে পারে।

আরেকটি প্রচলিত ধারণা হলো, পুরুষদের স্তন ক্যানসার হয় না। এমন ধারণা একদমই ভুল। আর যদি কোনো পরিবারে কোনো পুরুষের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকে, তা হলে সেই পরিবারের মেয়েরাও এই রোগের ঝুঁকিতে থাকেন। গবেষকদের ধারণা, জিনগত ত্রুটির কারণে ছেলেদের স্তন ক্যানসার হয়ে থাকে। বংশানুক্রমে সেই ত্রুটি পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যদের মধ্যেও থাকতে পারে।

শুধু স্তন ক্যানসার নয়, নারীরা বংশানুক্রমে ওভারি বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারেও আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার বংশানুক্রমে হয় না। আবার এক স্তনে ক্যানসারে আক্রান্ত হলে অন্য স্তনে এ রোগ হবে না- এমন ভাবনারও কোনো ভিত্তি নেই। বরং উল্টোটার বিষয়েই সতর্ক হতে হবে। কাজেই এক স্তনে ক্যানসার হলে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর অবশ্যই ফলোআপে থাকতে হবে।

স্ক্রিনিংয়ের জন্য ম্যামোগ্রাম করার আগে গর্ভে সন্তান আছে কিনা, নিশ্চিত হতে হবে। চিকিৎসককে আপনার মাসিকের সময় জানিয়ে নির্ধারণ করে নিন কখন এ পরীক্ষা নিরাপদ।

জেনে রাখা প্রয়োজন, গর্ভবতী নারীরাও ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এ সময় স্তনের আকার-আকৃতিতে পরিবর্তন আসায় স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হলেও তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই গর্ভাবস্থায় অবশ্যই সচেতনতা প্রয়োজন। আর এ সময় স্তনে কোনো পরিবর্তন সন্দেহজনক মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজনে থ্রি-ডি ম্যামোগ্রাম করাতে বলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা করালে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। তবে নারীদের সব ক্যানসার পারিবারিক বা বংশগত নয়। যেমন জরায়ুমুখের ক্যানসার। এর কারণ মূলত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণ।

যথাযথ স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসার হওয়ার আগে বা প্রি-ক্যানসার পর্যায়েই রোগ ধরা পড়তে পারে। যেমন- নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার টেস্টের মাধ্যমে জরায়ুমুখের ক্যানসার সম্পর্কে আগেভাগেই ধারণা পাওয়া সম্ভব। ইদানীং জেনেটিক টেস্টের মাধ্যমে স্তন বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকিও নিরূপণ করা যায়। আবার আরেকটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত যে, নারীদের অন্যান্য ক্যানসার হয় না। এ ধারণা ভুল। পুরুষের যেসব ক্যানসার হয়, যেমন- ফুসফুস বা অন্ত্রের ক্যানসার, নারীদেরও সেগুলো হতে পারে। কাজেই ক্যানসার প্রতিরোধে সার্বিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ক্যানসার সার্জারি বিভাগ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com