বিশ্বজুড়ে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর ওপর মহামারী করোনার ভয়াল থাবা। সব মিলিয়ে মানবজীবন ভীষণ বিপর্যস্ত। গবেষকদের ধারণা, ২০৩০ সাল নাগাদ ক্যানসারে আক্রান্তের কারণে বিশ্বজুড়ে এক ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে করোনা মহামারীর মতোই! ক্যানসার নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। করোনাকালে এমনই এক গবেষণায় উঠে এসেছে কিছু তথ্য। গবেষকরা বলছেন, সব ধরনের ক্যানসারের সঙ্গেই রয়েছে খাবারের নিবিড় সম্পর্ক। ১৭ দেশের ১৭০টি গবেষণায় উঠে এসেছে, মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় সামান্য পরিবর্তন আনা সম্ভব হলে এবং অর্গানিক খাবার গ্রহণ করলে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষাতেও উঠে এসেছে, কিছু খাবার প্রতিদিন গ্রহণ করলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। এই করোনাকালে ক্যানসারে আক্রান্তদের একটু বাড়তি সচেতন ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। একান্ত প্রয়োজন না হলে হাসপাতাল বা ঘরের বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। কারণ তাদের শরীরের টিস্যু খুব দুর্বল থাকে। গবেষকরা ক্যানসার প্রতিরোধী যেসব খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন, তা হলো-
হলুদ-কমলা রঙের সবজি ও গাজর : এগুলোয় আছে পর্যাপ্ত বিটাক্যারোটিন। তা শরীরে ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে।
টমেটো : টমেটোয় আছে লাইকোপেন। রক্তে এ লাইকোপেনের পরিমাণ কম হলে অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়।
পেঁয়াজ ও রসুন : এ দুটিতে আছে ক্যানসার প্রতিরোধক কয়েকটি উপাদান। তা খাদ্যনালি, পাকস্থলী, ফুসফুস ও যকৃতে ক্যানসারের আশঙ্কা অনেক কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করে রসুন।
গাঢ় সবুজ শাকসবজি : এতে আছে বিটাক্যারোটিন, ফোলেট ও লিউটেইন। এগুলো দেহে ক্যানসার প্রতিরোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছেÑ শাকসবজি যত সবুজ হবে, এতে তত বেশি পরিমাণ ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান থাকবে। বাঁধাকপি, ব্রুকলি, ফুলকপি, গাজর, পাটশাক, শালগম অল্প সিদ্ধ করলে সবজির খাদ্য উপাদান ঠিক থাকে। তা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এগুলো নিয়মিত খেলে খাদ্যনালির ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় ৭০ শতাংশ কমে যায়।
কম ফ্যাটযুক্ত দুধ : কম ফ্যাটযুক্ত দুধে আছে ক্যালসিয়াম, রিবোফ্ল্যাবিন এবং ভিটামিন এ, সি, ডি ইত্যাদি উপাদান। এগুলো ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে দেহে কাজ করে।
ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফলমূল : গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ভিটামিন ‘সি’যুক্ত ফল খেলে অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে যায়। তবে বিস্তারিত জানার প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই উচিত।
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মেডিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, শেরেবাংলানগর, ঢাকা