সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২১ পূর্বাহ্ন

করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে ৫২ কোটি হৃদরোগী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১৮৬ বার

বিশ্বের অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদরোগ। প্রতিবছরে বিশ্বে প্রায় ১৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৮৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় রোগটিতে। হৃদরোগের অন্যতম কারণ ধূমপান, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, মেটাবলিক সিনড্রোম, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রমহীন আধুনিক জীবনযাপন, বায়ুদূষণ ইত্যাদি। এই তথ্য বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের।

সংস্থাটি জানায়, বিশ্বের প্রায় ৫২০ মিলিয়ন বা ৫২ কোটি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত। কোভিড-১৯ তাদের জন্য বিপর্যয় ডেকে নিয়ে এসেছে। হৃদরোগীদের মধ্যে মারাত্মক কোভিড সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। এমনকি আমাদের দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যথেষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও আজ

পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস। দিবসটির এবারের মূল প্রতিপাদ্য ‘হৃদয় দিয়ে হৃদয়ের যত্ন নিন।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ২০ শতাংশের কারণ তামাক ব্যবহার। সেটি ধোয়াবিহীন বা ধোয়াযুক্ত যে কোনো ধরনের তামাকের ব্যবহারেই হতে পারে। এ ছাড়া ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যেও বাংলাদেশ অন্যতম। সেখানে আরও বলা হয়েছে, ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ এবং মস্তিষ্কের রক্তনালির রোগসহ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বাংলাদেশের মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে তরুণদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাদ্যগ্রহণ হৃদরোগের অন্যতম কারণ। ট্রান্সফ্যাট একটি ক্ষতিকর খাদ্য উপাদান, যা হৃদরোগ ও হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যুঝুঁঁকি বাড়ায়। ডালডা বা বনস্পতি ঘি এবং তা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার, ফাস্টফুড ও বেকারি পণ্যে ট্রান্সফ্যাট থাকে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি ৫ তরুণের মধ্যে ১ জন হৃদরোগ ঝুঁঁকিতে রয়েছে। বিশ্বজুড়ে হৃদরোগ ও হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যুঝুঁঁকি হ্রাস করতে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ‘খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা, ২০২১’ খসড়া প্রণয়ন করেছে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট নির্মূল হলে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত করবে সরকার।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ধূমপান ত্যাগ হৃদরোগ প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ৩০ মিনিটের জন্য নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন করা হৃদরোগের ঝুঁঁকি হ্রাস করে। হৃদরোগ প্রতিরোধের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা। নিয়মিত রক্তচাপের স্ক্রিনিং, কোলেস্টেরল স্তর এবং ডায়াবেটি রোগীদেরও নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাবার, ধূমপান পরিহারকরণ ও প্রাত্যহিক শারীরিক ব্যায়াম হার্ট ভালো রাখে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, প্রতিবছর বিশ্বে যে পরিমাণ মানুষের মৃত্যু হয় তার ৩১ শতাংশের মৃত্যু হয় হৃরোগে। এখন যে হারে হৃদরোগ হচ্ছে, আগামী ২০৩০ সালে বিশ্বে ২৩ মিলিয়ন লোকের মৃত্যু হবে। হৃদরোগের বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো। ভৌগোলিক কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলদেশে হৃদরোগে ঝুঁকি বেশি। কারণ এ দেশের মানুষ অল্প বয়সে ধূমপানে অভ্যস্ত হয় এবং চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খায়। এ ছাড়া ভৌগোলিক কারণে এ দেশের মানুষের উচ্চতা কম। এর ফলে তাদের হার্টের করোনারি আর্টারি (ধমনি) সরু থাকে। ফলে অল্পতেই কোলেস্টেরলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

এসব বিষয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, হৃদরোগ থেকে সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। এ ছাড়া বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী চলছে। হৃদরোগে আক্রান্তদের কোভিড সংক্রমণ হলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যেতে পারে। তাই হৃদরোগীরা যেন কোভিড আক্রান্ত না হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর কোভিড আক্রান্ত হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

হৃদরোগ প্রতিরোধে করণীয়- ১. ধূমপান ও তামাক ব্যবহার না করা ২. চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত অ্যান্টিহাইপারটেনশন ওষুধ মিস না করা, নিয়মিত রক্তচাপের স্ক্রিনিং করা, হাইপারটেনশনের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে পরীক্ষা করা ৩. প্রতিদিন অতন্ত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা, কারণ নিয়মিত ব্যায়াম হৃদরোগের ঝুঁঁকি হ্রাস করে ৪. রক্তে বেশি কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁঁকি বাড়ায়। তাই ৪০ বছর বয়সের পর প্রতিবছর কমপক্ষে একবারে কোলেস্টেরল পরিমাপ করা ৫. বেশি ওজন হ্রাস করে রক্তচাপ এবং রক্তের কোলেস্টেরলের স্তরকে স্বাভাবিক রাখা। ৬. ডায়াবেটিস শরীরের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে এবং হৃদরোগের ঝুঁঁকি বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ৭. বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে; বিশেষ করে যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে সেসব খাবার খেতে হবে। ৮. স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাটবাঁধা চর্বিজাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলতে হবে। হৃদরোগ প্রতিরোধে স্যাচুরেটেড নয় এমন চর্বি- সে ধরনের খাবার খেতে হবে। ৯. লবণ বেশি খেলে শরীরে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এর ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দিনে সর্বোচ্চ ৬ গ্রাম (এক চা চামচের পরিমাণ) লবণ খাওয়া যেতে পারে। ১০. ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাবার খেতে হবে। ১১. শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমানো সম্ভব। এ ছাড়া ১২.পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com