অ্যালার্জি মানুষের এক অসহনীয় ব্যাধি। এতে হাঁচি থেকে শুরু করে খাদ্য ও ওষুধের মারাত্মক প্রতিক্রিয়ায় শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে সামান্য অসুবিধাও দুর্বিসহ করে তোলে। ঘরের ধূলিবালি পরিষ্কার করছেন তো হঠাৎ করেই হাঁচি-কাশি শুরু হতে পারে, এমনকি শ্বাসকষ্টও হতে পারে। ফুলের গন্ধ নিচ্ছেন বা গরুর মাংস, চিংড়ি, ইলিশ, গরুর দুধ, বেগুন খেয়েছেন তো শুরু হয়ে গেল গা চুলকানি। চামড়ায় লাল চাকা হয়ে ফুলেও উঠতে পারে। এগুলো হলে অ্যালার্জি আছে বলে ধরে নিতে হবে। আর এই শীতকালে এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি বাড়ে।
অ্যালার্জি হওয়ার কারণ : প্রত্যেক মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম থাকে। কোনো কারণে এ ইমিউন সিস্টেমে সমস্যা দেখা দিলে তখন অ্যালার্জির বহিপ্রকাশ ঘটে। আমাদের শরীর সব সময়ই ক্ষতিকর বস্তু (পরজীবি, ছত্রাক, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া) প্রতিরোধের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করে থাকে। এ প্রচেষ্টা রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া বা ইমিউন বলে। কখনো কখনো আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়- এমন বস্তুর প্রতি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এর নাম অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। এর উপসর্গ হচ্ছে অনবরত হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং চোখ লাল হয়ে যাওয়া। অ্যালার্জি রাইনাইটিস দুধরনের। যেমন-
সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস : বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে একে বলে সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস : সারা বছর ধরে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে তাকে বলে পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস।
লক্ষণ ও উপসর্গ : সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের ক্ষেত্রে- ঘন ঘন হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া সমস্যা হয়। পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের উপসর্গ সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের মতোই। এ ক্ষেত্রে উপসর্গগুলোর তীব্রতা কম হয় এবং স্থায়িত্ব বেশি হয়।
অ্যাজমা বা হাঁপানি : এ রোগের উপসর্গ হচ্ছে- কাশি, ঘন ঘন শ্বাসের সঙ্গে বাঁশির মতো শব্দ হওয়া বা বুকে চাপ চাপ লাগা, শিশুদের ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে ঠান্ডা লাগা।
লক্ষণ : বুকের ভেতর বাঁশির মতো শাঁ-শাঁ আওয়াজ, শ্বাস ছাড়তে কষ্ট হওয়া, ঘন ঘন কাশি, বুকে আঁটসাঁট বা দম বন্ধভাব, ঘুম থেকে উঠে বসে থাকা ইত্যাদি।
সমন্বিত চিকিৎসা : যখন অ্যালার্জির সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়, তখন তা পরিহার করে চলার মাধ্যমে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অ্যালার্জি ভেদে ওষুধ প্রয়োগ করেও রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এ ছাড়া অ্যালার্জি জাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন নিয়ে রোগটি থেকে দূরে থাকা যায়।
বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ফলে শুরুতেই রোগটি ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে অ্যালার্জিক সমস্যা একেবারেই দূর করে রোগীর সুস্থ থাকা সম্ভব। তাই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।
লেখক : চর্ম, যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন
সহকারী অধ্যাপক, চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, শেরেবাংলানগর, ঢাকা
চেম্বার : ডা. জাহেদ’স হেয়ার অ্যান্ড স্কিনিক