শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন

দীর্ঘ অনশনে শরীরে যা ঘটতে পারে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১৪৬ বার

সামাজিক বা রাজনৈতিক কঠোর আন্দোলনে অনশন বিশ্বজুড়ে একটি প্রচলিত হাতিয়ার। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনেও অনশন কর্মসূচি পালন করছেন একদল শিক্ষার্থী। সোজাসাপ্টা কথায় অনশন হচ্ছে, না খেয়ে থাকা। অনশনকারীরা তাদের দাবি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত খাবার না খেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। অনশনে মৃত্যুর নজির খুব বেশি না থাকলেও মানব শরীর ও মনস্তত্ত্বে এ ধরনের কর্মসূচির প্রভাব ব্যাপক।

যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথের সহযোগিতায় ২০০৮ সালে দেশটির অন্যতম শীর্ষ মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত হয় অনশন নিয়ে একটি প্রতিবেদন। সেখানে বলা হয়, সুস্বাস্থের অধিকারী কেউ অন্তত ছয় থেকে আট সপ্তাহ কম খাবার খেয়ে বা না খেয়ে থাকতে পারেন। তবে যাদের স্বাস্থ্য খারাপ তারা তিন সপ্তাহের মধ্যে মারা পড়তে পারেন। আর পানি ছাড়া অবস্থা খুব দ্রুত খারাপের দিকে যেতে পারে। আবহাওয়া উষ্ণ থাকলে সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে মৃত্যুও হতে পারে।

ভারতের আয়রন লেডি অফ মনিপুর খ্যাত ইরম চানু শর্মিলা প্রায় ১৬ বছর অনশন করেছিলেন। আর্মড ফোর্সেস অ্যাক্ট নাইন্টিন ফিফটি এইটের এর প্রতিবাদে তিনি ২০০০ সালের ৫ নভেম্বর অনশন শুরু করেন। শেষ করেন ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট।

কারাগারে খাবার ও পানি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোয় প্রায় পুরোটা সময় তাকে নাকে নল দিয়ে জোর করে খাবার দেওয়া হয়েছে।

তবে একেবারেই খাবার গ্রহণ না করে অনশনের রেকর্ড ববি স্যান্ডের। বিতর্কিত আইরিশ রিপাবলিক আর্মির এ সদস্য কারাগারে টানা ৬৬ দিন না খেয়ে ছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি কোমায় চলে যান।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া কারেকশনাল হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস বলছে, অনশন বা না খেয়ে থাকার যে কষ্ট সেটা দুই বা তিন দিন পর আর থাকে না। কারণ তিনদিনের অনশনের পর মানবদেহ নিজের পেশিতে থাকা প্রোটিন ব্যবহার করে কোষের সক্রিয়তা বজায় রাখার প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ সংগ্রহ করে। এতে করে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইট বা খনিজ যেমন- পটাশিয়ামের মাত্রা দেহে ভয়ংকর পরিমাণে কমে যায়। একই সঙ্গে দেহ চর্বি ও পেশির আয়তন হারিয়ে ফেলে।

দুই সপ্তাহ পর অনশনকারীদের দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হয়। প্রচণ্ড মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, হাত-পা নাড়তে বা কথা বলায় ধীরগতি, হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া ও শীতের অনুভূতি হতে পারে।

দুই বা তিন সপ্তাহের মাথায় শরীরে থায়ামিনের (ভিটামিন বি-ওয়ান) মাত্রা কমে মারাত্মক স্নায়বিক সমস্যা সৃষ্টি করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বুদ্ধিবৃত্তি লোপ পাওয়া, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া ও নড়াচড়ার সক্ষমতা কমে যাওয়া।

সাউথ আফ্রিকান সাংবাদিক ডেভিড বেরেসফোর্ড ববি স্যান্ডের মৃত্যু নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসে লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, মৃত্যুর আগে স্যান্ডস মাথার ভেতরে বিভিন্ন কিছুর প্রতিধ্বনি শুনতে পেতেন। স্ট্রোকের রোগীর মতো তার মুখ বেঁকে যায়। তার পায়ে কোনো অনুভূতি ছিল ন। শুধু ফিসফিসিয়ে কথা বলতে পারতেন।

গবেষণা বলছে, এক মাস না খেয়ে থাকলে বা শরীরের ১৮ শতাংশ ওজন হারালে, মারাত্মক ও স্থায়ী জটিলতা দেখা দিতে পারে। পানি খেতে সমস্যা, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার মতো সমস্যা দেখা যেতে পারে। বিকল হয়ে পড়তে পারে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।

৪৫ দিন পার হয়ে গেলে, হৃদযন্ত্র অচল হয়ে বা মারাত্মক কোনো সংক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। অনশনের সময় শারীরিক ক্ষতির পাশপাশি মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এ সময় আগ্রাসী এবং আবেগী প্রতিক্রিয়া দেখা যাওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। জার্নাল অফ মেডিক্যাল এথিকসের মতে, এই প্রভাবগুলো কখনো এমন পর্যায়ে যায় যে অনশনকারীরা না খেয়ে মারা যেতে পারেন।

অনশন শেষ করার পর অনশনকারীদের খাওয়ানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ অনশনের সময় দেহের মেটাবলিজম বা বিপাক প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে।

গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টেরোলজি রিসার্চ অ্যান্ড প্র্যাকটিস জার্নালে ২০১১ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক সপ্তাহ না খেয়ে থাকা মানুষের দেহে ফের ইলেকট্রোলাইট ও পুষ্টি উপাদান প্রবেশ করানোর ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com