সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস ইসলামিক ফ্যাশন এ্যান্ড ডিজাইন কাউন্সিলের প্রধান আলিয়া খানের নারীদের ফ্যাশন সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ছেপেছে। তার চুম্বকাংশ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে কাতারভিত্তিক আরবি গণমাধ্যম আলজাজিরা মুবাশির। আরবি থেকে তা পরিমার্জিত ভাষান্তর করেছেন বেলায়েত হুসাইন।
আলিয়া খান ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, করোনাক্রান্ত বিগত দুই বছরে বিশ্ব এমন এক পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করল যা মানবজীবনকে আমূল বদলে দিয়েছে। গৃহে এবং কর্মক্ষেত্রে যেসব কঠোর পরিবর্তন অতিবাহিত হল তা মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান পদ্ধতিকে বেশ প্রভাবিত করেছে। উল্লেখ্য যে মহামারীতে মানবজীবনে যে রূপান্তর ঘটেছে-এটি যারা ইসলামী অনুশাসন মেনে জীবনযাপন করেন তাদের স্বাভাবিক জীবনাচার। এটিকে ‘মডেস্ট লাইফস্টাইল’ বা বিনয়ী জীবনধারা আখ্যা দেয়া হয়। একটি শালীন ও নির্মল জীবন গঠনের জন্য সাধারণত শৈশব থেকেই মুসলমানরা একইসঙ্গে শালীনতা ও কমনীয়তায় বেড়ে উঠতে থাকে। করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য মুখমণ্ডল আচ্ছাদিত করার বিষয়টি একটি স্বাভাবিক আচরণে রূপ নেয়ার পর আমার বোধগম্য হল-ইসলামী ফ্যাশন তো এর কথাই বলে এবং এরূপ পরিচ্ছদের প্রতিই উৎসাহ দেয়, যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আবর্জনা থেকে চেহারাকে মুক্ত রাখে।
ইসলামী ফ্যাশন মুসলমানদের ব্যবহারিক লক্ষ্যের প্রতি সহায়তা দেয়। কেননা, তা প্রকৃতি, বাস্তবতা এবং শালীনতা ও বিশুদ্ধ জীবনযাত্রার প্রতিনিধিত্ব করে। এতদ্সত্ত্বেও ইসলামী ফ্যাশন ও জীবনমান কটূক্তির স্বীকার। পর্দাপালনের কারণে পশ্চিমারা মুসলিম নারীদের দুর্বল ও অবহেলিত আখ্যায়িত করে, যা অবান্তর ও অবাস্তব ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা সংগঠন মুসলিম নারীদের হিজাব পরিধান ও পর্দাপালন নিষেধাজ্ঞার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। অথচ তাদের চোখ হিজাব পরিধানকারী পেশা; যেমন-নার্সিং, সার্জারি, কুকিং এবং অন্যান্য ধর্মের লোকদের; যেমন-শিখ, ইহুদী, ক্যাথলিক, হিন্দু এবং বৌদ্ধদের মাথাবৃত করা প্রত্যক্ষ করে না। কিন্তু কোভিড-১৯ আক্রান্ত বিগত দুই বছরে মাস্ক বিশ্বে নিকাবের প্রতীক হয়ে উঠেছে। মুখ ঢেকেরাখা এখন আমাদের সামাজিক সৌজন্যবোধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাস্ক পরিধানের দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পর অসংখ্য নারী পর্দা বা মুসলিম নারীদের নেকাবে মুখ ঢাকার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছেন এবং অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও একটি আবরণের পেছনেই নিজেদের বেশি নিরাপদ অনুভব করছেন। বিশেষত, পরপুরুষের অযাচিত দৃষ্টি থেকে নিজেদের সুরক্ষায় এটি তাদের মন কেড়েছে।
অথচ গত এপ্রিলেই ফরাসি সিনেটর এক সংশধোনী অনুমোদন করেছে, যেখানে বলা হয়েছে-১৮ বছর নিচের মেয়েরা হিজাব ও নেকাব পরিধান করতে পারবে না; এমনকি এমন একটি সক্রিয় পোশাক, যা আরাম, সৌন্দর্য ও দেহের সুরক্ষায় অতুলনীয়-সাতারের বুরকিনিও (সাতারের সময়ে পরার বিশেষ পোশাক) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়; বরং এটি মুসলিম নারীদের মৌলিক পোশাকের সাদৃশ্য হওয়ায় পোশাকটিকে ফ্রান্সের জন্য হুমকি আখ্যায়িত করা হয়েছে। অথচ বুরকিনি ডাইভিং স্যুট সদৃশের বেশি কিছু নয়।
পর্দা নিয়ে ফ্রান্স দ্বিমুখী আচরণ করেছে। দেশটিতে কেউ যদি মেডিকেল মাস্ক পরিধানবিহীন জনসম্মুখে বের হয় তাহলে তিনি ১৩৫ ইউরো জরিমানা গুণবেন। পক্ষান্তরে নারীরা নেকাবে মুখাবৃত করলে জরিমানা দিতে হবে ১৫০ ইউরো। এটি কেমন বিচার!
তবে আশা করা যাচ্ছে-করোনার কারণে ইসলামী ফ্যাশনের প্রতি বিশ্ববাসীর যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তা আগামী বছরগুলোতে পৃথিবীতে পোশাক পদ্ধতি ও অর্থনীতির মান গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইতোমধ্যেই আমরা লক্ষ্য করছি-ইসলামী ফ্যাশন ও পোশাকরীতি বৃহৎ একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে। আশার ব্যাপার হলো-ইসলামী ফ্যাশনের ভবিষ্যতকে অমিত সম্ভাবনাময় একটি খাত অনুভব করা যাচ্ছে, যার নানা নির্দশন ইতিমধ্যেই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। মুখাবরণের জন্য হিজাব পদ্ধতি একটি পরিক্ষীত, মার্জিত ও নিরাপদ ব্যবস্থা। এজন্য এখন এটি কথিত মূলধারার ফ্যাশনের অংশ হয়ে উঠেছে, যা আগামী পৃথিবীতে ব্যপকতার ক্ষেত্রে ইসলামী ফ্যাশনের জন্য একটি বড় সুযোগ।