হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়া মানুষের পাকস্থলী ও ডুওডেনামে আলসারের সৃষ্টি করে। জীবাণুুটি পাকস্থলীতে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষণস্থায়ী প্রদাহের সৃষ্টি করে। ক্ষণস্থায়ী প্রদাহ থেকে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের সৃষ্টি হয়। আর দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ থেকে অবশেষে পাকস্থলীতে ক্যানসারের সৃষ্টি হয়। পাকস্থলীর ক্যানসার একটি ঘাতকব্যাধি।
উন্নত বিশ্বে, যেমন- আমেরিকা ও ব্রিটেনে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দিন দিন কমে এলেও এশিয়ার চীন, জাপান ও দক্ষিণ এশিয়ায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব ক্রমে বাড়ছেই। এ রোগে নারীর চেয়ে পুরুষ বেশি ভুগে থাকেন। নিম্নবিত্ত সমাজের লোকেরা উচ্চবিত্ত সমাজের লোকের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হন। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। ৩০ বছর বয়সের আগে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুবই ক্ষীণ।
রোগের কারণ : ধূমপান ফুসফুসে ক্যানসারের জন্য বিশেষভাবে দায়ী হলেও পাকস্থলীতে ক্যানসার সৃষ্টিতেও এর ভূমিকা রয়েছে। ধূমপায়ীরা অধিক হারে পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অধিক লবণ ও ধোঁয়াযুক্ত খাবার, লবণে সংরক্ষিত খাবার, নাইট্রাইট ও নাইট্রেটসমৃদ্ধ খাবার প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ খাবার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
উপসর্গ : পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে। পরবর্তীকালে শরীরের ওজন কমে যাওয়া, পেটব্যথা, বমি বমি ভাব, রক্তবমি, কালো রক্তযুক্ত পায়খানা হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীর উপরের পেটে চাকা থাকে। পাকস্থলীর ক্যানসারের রোগী জন্ডিসের মাধ্যমে আক্রান্ত হলে বুঝতে হবে ক্যানসার লিভারে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকের পেটে পানি আসতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যানসার ঘাড়ের লসিকাগ্রন্থিতে ছড়াতে পারে। নারীদের ডিম্বাশয়ে ছড়ানোর ঘটনাও বিরল নয়। যেসব অঙ্গে পাকস্থলীর ক্যানসার সহজেই ছড়ায় সেগুলো হলো-লিভার, ফুসফুস, হাড় ও পেরিটোনিয়াম।
চিকিৎসা : প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসারের চিকিৎসা অপারেশনের মাধ্যমে করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন অঙ্গে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে- এমন রোগীকে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় না।