বাংলাদেশের জন্য সম্প্রতি একটি ভিসানীতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ঘটনাটি লজ্জিতর বিধায় সচেতন মহল দুঃখ প্রকাশ করেছে। এর আগে আরো পাঁচটি দেশ এ ধরনের মার্কিন ভিসানীতি পেয়েছে। সেগুলো হলো : নাইজেরিয়া, রুয়ান্ডা, সোমালিয়া, নিকারাগুয়া ও বেলারুশ। কিন্তু নির্বাচনের প্রায় সাত মাস আগে আমরা এমন একটি শাস্তিমূলক সতর্কবার্তা পেলাম। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বলেছেন, ‘This is a forword looking policy, meaning that our hope is that this policy will help prevent violence and promote a free and fair election this comming year in Bangladesh’ (জিল্লুর রহমান, ডেইলি স্টার : ৩০/০৫/২০২৩)। অর্থাৎ এই নীতিমালা বাংলাদেশে আগামী বছরে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে সহিংসতা বন্ধ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসম্পন্ন করতে সাহায্য করবে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশা পোষণ করছে। এর অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে বুঝে নিয়েছে যে, বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচন সহিংসতাপূর্ণ হবে এবং সুষ্ঠু ও অবাধ হবে না! আমরা এমন পর্যায়ে কিভাবে পৌঁছালাম যে, বিদেশীরা আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে আমাদের শাস্তির মাধ্যমে সাহায্য করতে অপমানজনক নীতিমালা জারি করেছে।
গ্লানির ভিসানীতি একদিনে বা হঠাৎ করে আসেনি। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধীরে ধীরে জাতিকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। শুধু নিজদের ক্ষমতায় থাকা অথবা যাওয়ার উদগ্র বাসনাচরিতার্থ করতে তাদের সব স্থূল স্বার্থের কর্মকাণ্ড এর জন্য দায়ী। দেশে মূলত দু’টি দল জাতীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এ পরিস্থিরি সৃষ্টিতে সরকারি দল আওয়ামী লীগ মোটা দাগে দায়ী। ১৪ বছর ধরে আমাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব দেশকে খাদের কিনারে ঠেলে নিয়ে গেছে। দীর্ঘ দিন একটানা ক্ষমতায় থাকার যাবতীয় ‘কাউন্টার প্রোডাক্টস’ বা বিপরীত প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। হাইব্রিড অতি-আওয়ামী লীগার জন্ম নিয়ে দুর্নীতি ও অপকর্মের সব ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়ছে। স্বার্থন্বেষী এই গোষ্ঠী অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ও অ্যাবসোলিউট ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছে। প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা, সেবা প্রভৃতি বিভাগের সুযোগ সন্ধানীরা সরকারকে ব্যবহার করে বিত্তবৈভব ও ক্ষমতার স্বাদে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে আছে। অন্যদিকে রাজনীতির মাঠে বিরোধীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ায় ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে বিবাদ বিসংবাদে লিপ্ত। মূলত এগুলো হলো একটানা দীর্ঘ দিন ক্ষমতার স্বাদের বিষাক্ত বর্জ্য। এর মধ্যে বিগত দু’টি নির্বাচন দেশ-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এগুলো আইনসিদ্ধ হয়েছে বলে দাবি করা হলেও নৈতিকতার মানে উত্তীর্ণ নয় বলে মনে করা হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংকে সরাসরি এসে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিয়ে ভোট হওয়ার আগে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেন। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ছিল। ফলে বিএনপির মতো একটি বড় দল মাত্র সাতটি আসনে জয় পায় এবং বিপরীতে ক্ষমতাসীন দল বেশির ভাগ আসন পেয়েছে; যা ছিল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিস্ময়কর ও অচিন্তনীয়। সমালোচকরা বলেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বও চাননি বিএনপি সাতটি আসন পাক। কিন্তু তৃণমূলের কোনো ছাড় না দেয়ার মানসিকতায় এ ধরনের অস্বাভাবিক ফল হয়েছে। এরপরে প্রায় সব স্থানীয় ও উপনির্বাচনে তৃণমূলের ক্ষমতাসীনদের সর্বগ্রাসী আচরণ দেখেছি আমরা। অর্থাৎ নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় ভোটদানের নিয়ন্ত্রণ শক্তিমানদের কব্জায় চলে গেছে! গত বছর গাইবান্ধার একটি উপনির্বাচনে সিসিটিভির মাধ্যমে নির্বাচনের এ চিত্র দেখা গেছে। এমন একটি পটভূমিতে সামনের নির্বাচন কেমন হবে তা নিয়ে দেশে বিদেশে বড় ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রাজনীতির অঙ্গনে গত ১৪টি বছর বিরোধী গোষ্ঠীকে নিষ্প্রভ করে রাখতে হামলা, মামলা, গ্রেফতার, গুম, হত্যা ইত্যাদি সব হতে দেখা গেছে। অন্য দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি অনুগত বিরোধী দল গঠন করে তাতে সওয়ার হয়ে এক ধরনের স্বরচিত-অদ্ভুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বার বার ক্ষমতাসীন হওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে নির্বাচনী ব্যবস্থার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হুমকিতে।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতির এমন একটি অস্থির অবস্থায় বাংলাদেশ বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং বৈশ্বিক মেরুকরণের সুবাদে পৃথিবীর মানচিত্রে আমাদের গুরুত্ব হঠাৎ করে বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই স্পর্শকাতরতা আমাদের নেতারা বুঝতে ভুল করেছেন অথবা জেনে বুঝে হিসাব কষে ভুল করেছেন এবং আমরা নিজেদের সিনো-মার্কিন দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দিয়েছি। বাংলাদেশকে কাছে পাওয়ার সিনো-মার্কিন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে চীন আমাদের সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলো। ক্ষমতাসীনরা সেসব সহযোগিতা লুফে নিলেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ হলো এবং বাংলাদেশকে চীনের বলয় থেকে বের করে আনতে সক্রিয় হয়ে উঠল। অন্য দিকে চীনের প্রচ্ছন্ন হুমকি আসতে থাকে আমেরিকার সাথে গাঁটছড়া না বাঁধতে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র আরো আগ্রাসী হয়ে উঠে এবং সংঘটিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর স্যাঙ্কশন জারি করে। প্রকাশ্যে মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের ইস্যুটি সামনে নিয়ে আসে বাংলাদেশকে বাগে আনতে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে সম্ভব হবে চীনের বলয় থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনা। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলের পথ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে নতুন মার্কিন ভিসানীতি প্রণীত হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সরাসরি জড়িয়ে ভিসানীতির মতো অপমানজনক প্রক্রিয়া আমেরিকা কর্তৃক জারি হওয়ার পটভূমি তৈরিতে সরকারবিরোধী শিবির ‘বিএনপি’রও কিছু দায় রয়েছে! বিএনপির দলীয় কিছু সদস্যের আপসকামিতা ও ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও এর জন্য দায়ী । ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলটি সঠিক অবস্থান নিতে পারেনি। পরে নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলন নির্বাচনের পরদিন হঠাৎ করে থামিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি। সেই যাত্রার আন্দোলন আরো সপ্তাহখানিক ধরে রাখলে হয়তোবা বাংলাদেশের ইতিহাস আজকের মতো করে লিখতে হতো না। পরে সেই নির্বাচনে না যাওয়ার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হয়েছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অদূরদর্শিতার সাথে একজন বিতর্কিত ও ব্যর্থ রাজনীতিকের নেতৃত্বে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। এ নির্বাচনে কথিত কারচুপির যথেষ্ট প্রমাণাদি থাকার দাবি করা সত্তে¡ও আন্দোলন দূরে থাক আইনগত লড়াইয়েও যায়নি বিএনপি। পাঁচজন সংসদ সদস্য নিয়ে সংসদে যোগদান করাও শোভন দেখা যায়নি। এতে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছিল। এ ছাড়া ২০১৫ সালের অবরোধ থেকে উপকৃত হয়নি! সেই অবরোধে সংঘটিত সহিংসতার সব দায় মিডিয়ার সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ সফলভাবে বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। সেসব সহিংস ঘটনার আগুন সন্ত্রাস হিসেবে প্রচার করা সম্ভব হয়েছিল। যদিও এগুলোর পেছনে সরকার ছিল বলে প্রমাণ হাজির করেন অনেকে। এরপর দীর্ঘ ১২ বছর বিএনপিকে জনপ্রিয় কোনো বিষয় নিয়ে আন্দোলনে নামতে তেমন একটা দেখা যায়নি। শুধু দলীয় এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক কিছু ইস্যুতে সরব থাকলেও পেঁয়াজ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, ভোজ্যতেলসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অনেক ইস্যু সামনে হাজির হলেও এসব জীবনঘনিষ্ঠ জনপ্রিয় ইস্যুগুলো পুঁজি করতে পারেনি। ফলে তাদের পক্ষে রাজপথে জনতার ঢল নামানো সম্ভব হয়নি; যেটা হলো গণআন্দোলন সফলতার অন্যতম নিয়ামক।
তবে আন্দোলনে সফল না হলেও বিএনপির জনপ্রিয়তা বেড়েছে তাদের ওপর ক্ষমতাসীনদের নির্যাতন, নেত্রীর কারাবাস এবং সর্বোপরি ক্ষমতাসীনদের প্রতি প্রাকৃতিকভাবে (এন্টিইনকামবেসী ফ্যাক্টর) সমর্থন কমার কারণে। কিন্তু শক্তিশালী কোনো গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় ক্ষমতাসীনরা নির্র্ভার হয়ে আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল। অন্য দিকে মার্কিনিদের ধারণা, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার আসবে তাকে চীনের বলয় থেকে বের করে এনে বাংলাদেশকে সহজে ‘আইপিএস’সহ অত্র অঞ্চলের অন্যান্য ভূরাজনৈতিক স্বার্থে পাশে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশকে ঘিরে আমেরিকার সব তৎপরতার অন্যতম উদ্দেশ্য এটিই। যুক্তরাষ্ট্র কোনো দলকে ভালোবেসে ভিসানীতি দেয়নি। এ নীতি দিয়েছে সম্পূর্ণ গণতন্ত্র তথা নিজেদের স্বার্থে।
মার্কিন ভিসানীতি স্যাঙ্কশনের চেয়েও শক্তিশালী হবে বলে অনেক মনে করেন। নির্বাচন প্রক্রিয়া অশুদ্ধ করার আদেশ দানকারী থেকে শুরু করে পালনকারী এবং তাদের স্বামী বা স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিরাও এ নীতির আওতাভুক্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা যাকে মনে করবে যে, নির্বাচন প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ করার কাজে জড়িত তার বেলাতে এ নীতি প্রযোজ্য হতে পারে। ফলে ইতোমধ্যে এ নীতিমালার সরাসরি প্রভাব দেখা গেছে সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর মহানগরী নির্বাচনে। অর্থাৎ এ নীতির প্রথম বলি (অন্যায়ভাবে জয়ী হতে পারেননি) হয়েছেন নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা। অন্য দিকে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যগুলোয় নিরপেক্ষতার বিষয়ে কঠোর সব সতর্কবাণী শোনা যাচ্ছে। এতোদিন মনে হচ্ছিল একটি দলকে নির্বাচিত করতে ইসির সব কর্মকাণ্ড চলছে!
কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বডি ল্যাংগুয়েজে হতবিহবলতার ভাব দেখা যাচ্ছে। তারা এমনি হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে যে, জামায়াতের কয়েকজন আইনজীবী নেতা বিক্ষোভ সমাবেশ করার দরখাস্ত নিয়ে ডিএমপি অফিসে গেলে সেখানে তাদের আটক করা হয়; যদিও পরে ছেড়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ ভয়ের মধ্যে থাকলে মানুষের সিদ্ধান্ত ভুল হতে থাকে। সরকারি দলকেও বেশ অস্থির মনে হচ্ছে। তীব্র প্রতিক্রিয়ায় নেতারা প্রকাশ্যে বিভিন্ন মার্কিনবিরোধী বক্তব্য সংসদে এবং বিদেশী সংবাদমাধ্যমে দিয়েছেন। এমনকি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হয়। দলের মহাসচিব প্রতিদিন হরেক রকম কথা বলছেন এ নীতি নিয়ে। দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে এবং বিরোধীদের চাপে রাখতে নেতারা বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। সম্ভবত এ বিপদ মোকাবেলা করতে তারা একটি আগ্রাসী বা আক্রমণাত্মক এবং একই সাথে বিরোধী দলের সাথে সমঝোতার স্ট্যাটেজি অনুসরণ করতে চাচ্ছেন। এমন কি জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতা কামনা করতেও দ্বিধা করছেন না!
মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর চীনের ভাইস মিনিস্টার সুনওয়েডং বাংলাদেশ সফরে এসে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে তাকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জোর দিয়েছেন। আসলে রোহিঙ্গা সমস্যাটি জিইয়ে রেখে চীন বাংলাদেশের জন্য একটি রোহিঙ্গা কার্ড তৈরি করে রেখেছে; তা সময়ে সময়ে ব্যবহার করার উদ্দেশ্য! আর ভারত এখনো এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। চীন থেকে বাংলাদেশ দূরে থাকুক এটা ভারতেরও চাওয়া। একই সাথে বর্তমান সরকারি দলকে আবার ক্ষমতা দেখতে চায় দিল্লি। কাজেই ভারত রয়েছে উভয় সঙ্কটে। তাই দেশটির সুশীলদের লেখায় নিদারুণ অন্তর্জ্বালার ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় বিশ্লেষক শ্রী রাধা দত্ত বলেছেন, ‘পরপর দুটো নির্বাচন নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠলেও ভারত চোখ বুজে ফলাফলকে মেনে নিয়েছে। এটা ঠিক যে, ভারত আওয়ামী লীগকে অন্ধের মতো সমর্থন করেছে কিন্তু আমেরিকা এখন যেভাবে ক্ষেপে উঠেছে সেটা ভারতের জন্য চিন্তার জায়গা তো বটেই সেখানে ভারত কী করতে পারবে তা নিয়ে আমি সন্দিহান’ (নয়া দিগন্ত : ২৯/০৫/২০২৩)।
বিশ্লেষকদের মতে, আমেরিকার ভিসা থেরাপি হয়তো কাজ করবে! বাংলাদেশ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগোবে। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারও আসতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে সরকারি দল নির্বাচন বর্জনের কার্ড খেলে আরো সময় নিয়ে একটি সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছে নির্বাচনে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। তখন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের মোড় আবারো একটি বাঁক নিতে পারে। অন্য দিকে বিএনপি হয়তোবা এ নীতিতে মহাখুশি; যেন বিজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে! রাজনীতি একটি মাত্র ঘটনার বিষয় নয়, বরং তা অনেক ঘটনার সমন্বিত ফল। সরকারি দল আলোচনার সঙ্কেত দিচ্ছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা পরিপক্বতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হলে নতুন ফাঁদে পা দিয়ে ফেলতে পারেন! তাই আত্মতুষ্টিতে ভুগলে তা বিএনপির ভুলের তালিকা লম্বা করবে মাত্র। কৌশলী আন্দোলনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করতে হবে। তবে আন্দোলনে এবার সহিংসতার ফাঁদে পড়া হবে আরো মহাভুল, যা বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে যোজন যোজন দূরে নিক্ষেপ করবে।
সর্বোপরি নতুন ভিসানীতির মাধ্যমে হয়তোবা দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হবে। কিন্তু ভিসানীতির কলঙ্কে ভূলুণ্ঠিত দেশের ইজ্জত সম্মানের কী হবে?
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক