যশোরের চৌগাছায় বৃষ্টির ভরা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা নেই। খরায় আমনের ক্ষেত শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। আমন চাষ নিয়ে বিপাকে রয়েছে উপজেলার চাষিরা। সেচের পানিই একমাত্র ভরসা। কিন্তু সেচ, সার ও কিটনাশকের দাম বাড়াই এ বছর আমন চাষে বিঘা প্রতি পাঁচ হাজার টাকা বেশি খরচ হবে। ফলে চাষিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ। অনেকে ধান চাষ বাদ দিয়ে অন্য আবাদে ঝুঁকছেন।
উপজেলা কৃষি অধিদফতরের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় চলতি মৌসুমে আমন চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৩৩৬ হেক্টর। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) পর্যন্ত রোপন হয়েছে ৯০৫০ হেক্টর। আমনের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহ থেকে ১৫ শ্রাবণ পর্যন্ত। বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেতে আগাছা, রোগ ও পোকার আক্রমণ বেড়ে যাবে। এতে ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
উপজেলার বড়গোবিন্দপুর গ্রামের আমন চাষি সেলিম হোসেন বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমনের ক্ষেত। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা নেই। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় ধানক্ষেতে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে কৃষকের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। সেচ ছাড়া আমনের জমি প্রস্তুত করতে পারছেন না চাষিরা। বিগত বছরে আষাঢ়ের ১৫ তারিখের পর থেকে জমিতে রোপা আমনের চারা রোপণ শুরু করতেন এই এলাকার কৃষকরা। কিন্তু প্রচণ্ড খরার কারণে চলতি সৌসুমে দেরি হচ্ছে।
উপজেলার সিংহঝুলী গ্রামের আমন চাষি আবু তৈয়ব বলেন, বাংলা দিনপঞ্জির হিসাবে আজ (বৃহস্পতিবার) ৫ শ্রাবণ। কিন্তু এই ভরা বর্ষার মৌসুমে স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা নেই। কখনো কখনো দুয়েক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা মিলছে না। এতে উপজেলার প্রায় দুই হাজার হেক্টর আমন চাষি বিপাকে পড়েছে। চাষিদের স্বপ্নের ক্ষেত শুকিয়ে হয়ে গেছে চৌচির। প্রচণ্ড খরায় বিবর্ণ হচ্ছে সবুজ ধানের চারা ক্ষেতের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এদিকে দীর্ঘ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় আমন খেতে সময়মতো হাল দিতে পারছেন না কৃষকেরা। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। তীব্র তাপে প্রাণীকূল ও জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। খাঁ খাঁ করছে ফসলি মাঠ। অন্যদিকে পাট জাগ দেয়ার সময় হয়ে এসেছে। কিন্তু কোথাও পানি না থাকায় পাট চাষিদের কপালেও পড়েছে চিন্তার ভাজ।
উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের আন্দুলিয়া গ্রামের আমন চাষি কবির হোসেন বলেন, ভরা মৌসুমেও বৃষ্টি না হওয়ায় প্রচণ্ড তাপদহে তার আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক লাভলুর রহমান, আবু সিদ্দিক, ছোট খোকনসহ অনেকে বলেন, খরায় মাঠে ধান-পাট ও সবজির গাছ পুড়ে বিবর্ণ হতে শুরু করেছে। আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়েছে। আমনের জমি তৈরি করতে জমিতে হাল দেয়া যায়নি। বৃষ্টি না হওয়াতে সময় মতো চারা রোপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে সেচ নিয়ে আমন রোপন করছেন। এতে বিঘা প্রতি খরচ বাড়বে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা।
তারা জানান, সেচ, সার, তেল ও কিটনাশকের দাম বাড়ায় ধান উৎপাদন খরচ বাড়লেও বিক্রি করতে হচ্ছে কম দামে। তাই অনেক কৃষক ধানের আবাদ বাদ দিয়ে ড্রাগন, পেয়ারা, পটল, বেগুন, মরিচ ইত্যাদি আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।
আজ উপজেলার সিংহঝুলী, ফুলসারা, সুখপুকুরিয়া, নারায়নপুর, হাকিমপুর, জগদিশপুর, পাতিবিলা, স্বরুপদাহ, ধুলিয়ানী ও পাশাপোল এলাকার মাঠে ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি না হওয়ায় ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। খাঁ খাঁ করছে মাঠের পর মাঠ। অনেকে সেচের পানি নিয়ে আমনের ক্ষেত তৈরি করছেন। অনেক পাট চাষির পাট কাটা জরুরি হলেও পানির অভাবে কাটতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মুসাব্বির হুসাইন বলেন, খরার কারণে কৃষকেদের মাঠে হাল চাষ করতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে এ কারণে ফলনে উপজেলায় তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। বৃষ্টি হতে দেরি হলে সেচ দিয়ে জমি তৈরি করে রোপা আমন ধান রোপণ করা যেতে পারে।