বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন

মহামারিতে আক্রান্ত ব্যক্তির ৭ করণীয়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০
  • ২৭৫ বার

যখন কোনো অঞ্চলে মহামারি দেখা দেয় তখন ভালো-মন্দ, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী সবাই তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তবে ফলাফলের বিচারে সবাই সমান নয়। কেননা যখন কোনো বিশ্বাসী ব্যক্তি মহামারিতে আক্রান্ত হয়, তখন আল্লাহর প্রতি তার আস্থা, বিশ্বাস ও প্রত্যাশাগুলো একজন অবিশ্বাসী থেকে অবশ্যই ভিন্ন হয়—যা তার মর্যাদা বৃদ্ধি ও পাপ মার্জনা করে। দৃঢ় বিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি সুধারণা বিপদ-আপদকে মুমিনের জন্য রহমতে পরিণত করে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মহামারি আমার উম্মতের জন্য শাহাদাত ও রহমতস্বরূপ। আর অবিশ্বাসীদের জন্য শাস্তি।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২০৭৬৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিনের বিষয় কী বিস্ময়কর! তার সব কিছু কল্যাণকর—যা মুমিন ছাড়া আর কারো জন্য প্রযোজ্য নয়। সে যদি কোনো আনন্দের বিষয় লাভ করে এবং কৃতজ্ঞতা আদায় করে, এটা তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি কোনো কষ্টকর বিষয়ে সে আক্রান্ত হয়ে ধৈর্যধারণ করে, এটাও তার জন্য কল্যাণকর।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)

 

মহামারিতে আক্রান্ত হলে মুমিনের করণীয়

মহামারিতে আক্রান্ত হলে মুমিন কী করবে এবং কী করবে না সে সম্পর্কে কোরআন, হাদিস ও ইসলামী আইনের বইগুলোয় বিভিন্ন নির্দেশনা পাওয়া যায়, যার কোনো-কোনোটি শুধু মহামারিসংক্রান্ত, আর কোনো-কোনোটি সাধারণ সব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্যও প্রযোজ্য। হাফেজ ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.) মহামারিসংক্রান্ত তাঁর বিখ্যাত বই ‘বাজলুল মাউন ফি ফাদলিত তাউন’-এ মহামারি আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য চারটি করণীয় নির্ধারণ করেছেন। অন্য মুহাদ্দিস ও ফকিহরা অনুরূপ আরো কিছু করণীয় বর্ণনা করেছেন। যার কয়েকটি তুলে ধরা হলো—

 

এক. চিকিৎসা গ্রহণ ও সুস্থতার জন্য দোয়া করা : কোনো মুমিন মহামারিতে আক্রান্ত হলে তার প্রথম কাজ আল্লাহর কাছে সুস্থতা কামনা করা এবং চিকিৎসা গ্রহণ করা। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের সুস্থতার জন্য দোয়া করতে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি বলেছেন, প্রত্যেক রোগের রয়েছে আরোগ্য। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর চাচাকে বলেন, ‘সুস্থতার জন্য বেশি বেশি দোয়া করুন।’ (মুসতাদরিকে হাকিম, হাদিস : ১৯৩৯)

পবিত্র কোরআনেও আল্লাহর কাছে দোয়া করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আমার শাস্তি যখন তাদের ওপর আপতিত হলো তখন তারা কেন বিনীত হলো না? অধিকন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের চোখে শোভন করেছিল।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৪৩)

 

দুই. আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা : মহামারিতে আক্রান্ত ব্যক্তি আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকবে। সে বিশ্বাস করবে তার এই রোগাক্রান্ত হওয়ার মধ্যে নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো কল্যাণ রেখেছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যাকে দান করা হলো এবং সে কৃতজ্ঞতা আদায় করল, যে বিপদগ্রস্ত করা হলো এবং ধৈর্য ধারণ করল, যে অবিচার করল এবং ক্ষমা প্রার্থনা করল, যে অত্যাচারিত হলো এবং ক্ষমা করে দিল; লোকেরা জিজ্ঞেস করল—হে আল্লাহর রাসুল তার জন্য কী রয়েছে? তিনি তিলাওয়াত করলেন, ‘তাদের জন্য রয়েছে প্রশান্তি (বা নিরাপত্তা) এবং তারাই সুপথ প্রাপ্ত।’ (আল মুজামুল কাবির, হাদিস : ৬৬১৩; সুরা আনআম, আয়াত : ৮২)

 

তিন. আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করা : মুমিন মহামারিতে আক্রান্ত হলেও মহান আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করবে। সে ভাববে, আমি আল্লাহর এক নগণ্য সৃষ্টি। আমার প্রতি আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহ রয়েছে। আমাকে শাস্তি দেওয়ার মুখাপেক্ষী আল্লাহ নন; বরং সে আল্লাহর কাছে নিজের পাপের জন্য অনুতপ্ত হবে এবং তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের প্রত্যাশা করবে। মহানবী (সা.)-এর শেখানো একটি দোয়া থেকে সুধারণা ও প্রার্থনার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তিনি শেখান, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের ওপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস :  ৬৩০৬)

 

চার. ধৈর্যধারণ করা : যেকোনো বিপদ ও সংকটে মুমিন ধৈর্যহারা হবে না; বরং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা মোকাবেলা করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর কোনো বান্দার কল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়ায় তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তাঁর কোনো বান্দার অকল্যাণ চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরোপুরি শাস্তি দেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৬)

 

পাঁচ. আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান আশা করা : বিপদ-আপদের কারণে মুমিনের যে পার্থিব ক্ষতি ও কষ্ট হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। সুতরাং মুমিন সংকটকালে ধৈর্যধারণ করবে এবং আল্লাহর কাছে এর উত্তম প্রতিদান আশা করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে—এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফোটে এসবের বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস :  ৫৬৪১)

 

ছয়. অন্যের সংস্রব থেকে দূরে থাকা : কোনো ব্যক্তি মহামারিতে আক্রান্ত হলে সে অন্যের সংস্রব থেকে দূরে থাকবে। যেন অন্যরা আক্রান্ত না হয়। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) সুস্থ ও অসুস্থের অসাবধান সংমিশ্রণের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছেন, ‘কেউ যেন কখনো রোগাক্রান্ত উট সুস্থ উটের সঙ্গে না রাখে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭৭১)

 

সাত. নিজ অবস্থান ছেড়ে না যাওয়া : মহামারিতে আক্রান্ত হলে মুমিন তার অবস্থান ছেড়ে অন্যত্র যাবে না; বরং ধৈর্যের সঙ্গে নিজ এলাকায় অবস্থান করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো এলাকায় মহামারি দেখা দিলে তা ছেড়ে যেতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং যখন ব্যক্তি নিজে আক্রান্ত হবে এবং সে অন্যত্র গেলে অন্যদের জন্য ঝুঁকি তৈরি হবে, তখন তার নিজ অবস্থান ছেড়ে যাওয়া কিছুতেই উচিত হবে না। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মহামারি থেকে পলায়নকারী যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়নকারীর মতো এবং মহামারিতে ধৈর্যধারণকারী যুদ্ধের ময়দানে ধৈর্যধারণকারীর মতো।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৪৫১৮)

মোটকথা, মুমিন মহান স্রষ্টা আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করত ধৈর্যধারণ করবে এবং এই বিপদের জন্য আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান আশা করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com