বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রোববার নয়াপল্টনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। সেখানে বক্তব্য দেয়ার সময় খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চাইতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এই সরকারের প্রতিহিংসায় দীর্ঘদিন যাবত কারাবন্দী রয়েছেন। উদ্দেশ্যপূর্ণভাবেই রাজনৈতিকভাবে তাকে দূরে ঠেলে ফেলা ও হত্যার জন্যই তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি বার বার কমপ্লেইন করেছেন কিন্তু সরকার তার কোন কথা শুনেনি। তার কোথাও কোনো চিকিৎসা হয় নাই। বাসায় আসার পর তাকে বলা হয়েছে, কিন্তু সবাইকে যেতে পারবেন না। কিন্তু মেডিক্যাল রিপোর্ট বার বার বলেছে ম্যাডামের যে অসুখ এর চিকিৎসা এদেশে করা সম্ভব নয়। তার চিকিৎসার জন্য উন্নত দেশ, উন্নত মানের চিকিৎসা করা প্রয়োজন। আমরা দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার বলেছি। কিন্তু সরকার খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন না।
‘আওয়ামী লীগ কখনোই ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেনি, জোর করে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে তারা বার বার ক্ষমতা দখল করেছে। মানুষের কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার, মানুষের ন্যূনতম যে স্বাধীনতার অধিকার তা কেড়ে নিয়েছে। তারা দেশটাকে বিকিয়ে দিয়েছে।’
পুলিশের সাবেক প্রধান, সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে তাদের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে সতর্ক হতে হবে। তারা গণমাধ্যমকে হুমকি দিচ্ছে, জাতি সত্য তথ্য জানতে না পারে। এভাবে দেশের প্রত্যেকটি কাঠামোই নষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারত তাদের অনেকগুলো চুক্তি করে নিয়েছে। কিন্তু আমাদের কোনোটাই হয়নি। আমরা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। প্রত্যেকটি নদীর হিস্যা চাই, এটা আমাদের অধিকার। সরকার পুরোটাই নতজানুতে চলছে। মিয়ানমার থেকে গুলি আসে, অথচ সরকার কিছুই বলে না। এ সরকার জগদ্দল পাথরের মত বুকে চেপে বসে আছে।
গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা ভীষণ অসুস্থ- এমন কথা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, দোয়া করুন। গণতন্ত্রের প্রতীক যিনি স্বৈরাচারের কাছ থেকে আমাদের গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন। যিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্য সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। কেয়ারটেকার গভমেন্টকে সংবিধানের সাথে সংযোজন করেছিলেন। এদেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। এদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধি করার জন্য কাজ করেছিলেন। কী দুর্ভাগ্য আমাদের, সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদিয়া বিনা চিকিৎসায় আজ বন্দি অবস্থায়, তিনি আজ মৃত্যুর শয্যায়। আসুন দোয়া করি, তাকে যেন আমাদের মাঝে আবার ফিরে দেন, আমরা যেন তার নেতৃত্বে আবার আগের মতো জেগে উঠতে পারি। এই ভয়াবহ দানব, রাষ্ট্রের, মানুষের, জাতির সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে, তাকে যেন পরাজিত করতে পারি। আসুন আমরা সেই দোয়াই করি আল্লাহতালার কাছে। আল্লাহতালা যেন আমাদের সেই তৌফিক দেন, সেই শক্তি দেন। আমরা যেন আমাদের নিজের দাঁড়াতে পারি।
দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।