করোনা পরিস্থিতিতে যাত্রীস্বল্পতার কারণে বিষম বিপাকে পড়েছেন দেশের পরিবহন ব্যবসায়ীরা। বিরাজমান মহামারীর প্রেক্ষাপটে এবং অনেক বেশি ভাড়ার দরুন গণপরিবহনে যাত্রী এখন খুব কম। ভাড়া কমার কোনো লক্ষণ নেই। তদুপরি এক মাসেরও বেশি আগে ‘সাধারণ ছুটি’ বাতিল করা হলেও জনজীবন তথা মানুষের যাতায়াত আজ পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি। এ অবস্থায় পরিবহন মালিকরা যাত্রীর অভাবে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এবং হাড়ভাঙা পরিশ্রম সত্ত্বেও পরিবহন শ্রমিকরা ন্যায্য ও প্রাপ্য পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। অপর দিকে, বাস-মিনিবাসে ভাড়া হঠাৎ অন্তত ৬০ শতাংশ বাড়ানো হলেও যাত্রীসেবার মান না বাড়ানোর অভিযোগ ক্রমবর্ধমান। বহু গণপরিবহনেই সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি পালন করা হয় না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যাত্রীদের দুর্ভোগ ও অসন্তোষের পাশাপাশি তাদের বিরাট অংশই হেঁটে কিংবা সাইকেলে চলাচলের প্রবণতা বাড়ছে। অপেক্ষাকৃত সচ্ছল, কেউ কেউ যাতায়াতের উদ্দেশ্যে মোটরবাইক কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, যাত্রীদের অভিযোগÑ একে তো করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ এবং এ কারণে মৃত্যুর মারাত্মক শঙ্কা, তদুপরি বাস ও মিনিবাসের ভাড়া অনেক বেড়ে গেছে। অনেক পরিবহনেই স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগও কম গুরুত্ববহ নয়। বিশেষত আসন ও যাত্রীদের ব্যাপারে স্যানিটাইজার ব্যবহার না করা এবং নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে যাত্রী বেশি নেয়ার অভিযোগ বারবার উঠছে।
মহামারীজনিত লকডাউনে দু’মাসাধিককাল বন্ধ থাকার পর গত ৩১ মে যান চলাচল শুরু করা হয় সরকারের নির্দেশনামাফিক। কর্তৃপক্ষ যাতায়াতের অনুমতি দেয়ার সাথে প্রতিটি ট্রিপে সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি ও ব্যক্তিগত সুরক্ষার নিয়মকানুন মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছে। সে মোতাবেক, প্রথম দিকে কিছু দিন বাস-মিনিবাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায় এবং মাস্ক তো বাধ্যতামূলক বটেই, কোনো কোনো গাড়িতে গ্লাভস না পরে যাত্রীরা উঠতে পারেননি। কিন্তু ভাড়ার পরিমাণ এতটা বাড়িয়ে দেয়া হয় যে, তা মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে চলে গেছে। এতে প্রতিদিন গণপরিবহনের প্রায় সব রুট ও ট্রিপে যাত্রীর ঘাটতি দেখা যায়। করোনা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন নির্ধারিত যাত্রীর সংখ্যা অর্ধেক করে দিয়েছে বর্ধিত ভাড়ার বিপরীতে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আয়রোজগার কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই বর্ধিত ভাড়ার বোঝা বহন করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে। বিদ্যমান অবস্থায় পরিবহন মালিকরা দাবি করছেন, ‘প্রথম প্রথম যাত্রীদের পক্ষ থেকে বেশ সাড়া মিললেও কিছু দিন পরই তাদের সংখ্যা কমতে থাকে। আর এখন মুনাফা দূরের কথা, প্রতিদিনের খরচই উঠছে না। তাই পরিবহন মালিকদের লোকসান পোষাতে হয় গাঁটের পয়সা দিয়ে। কিন্তু এভাবে গাড়ি চালানো এবং শ্রমিকদের মজুরি দেয়া বেশি দিন সম্ভব হবে না।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে বলা হয়েছে, এসব কারণে দূরপাল্লার ৭০ শতাংশ বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তা ছাড়া, অনেক জেলার বিভিন্ন শহরে ও বিরাট অংশে নতুন করে লকডাউন চলছে বিধায় জনসাধারণ আন্তঃজেলা ভ্রমণে উৎসাহী নয়। অন্য দিকে, সরকার নির্ধারিত ৫০ শতাংশের বদলে মাত্র ২৫ শতাংশ যাত্রী পাওয়ায় কিছু লোকাল বাস ধুঁকে ধুঁকে চলছে।
দীর্ঘ রুটের যানবাহনে ৪০ সিটে পাওয়া যায় মাত্র পাঁচ-সাতজন যাত্রী। তবে যাত্রীস্বল্পতার কথা বলে কোনো কোনো সময়ে গাড়ি ছাড়তে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা দেরি করার অভিযোগও খাটো করে দেখা যায় না।
আমাদের প্রত্যাশা, মহামারী পরিস্থিতির যথাশিগগিরই উন্নতির জন্য সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ নেবে, যেন জনমনে ভীতি ও উদ্বেগ হ্রাস পায়। অন্যথায় পরিবহনসহ কোনো ক্ষেত্রে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং ভাড়ার পরিমাণ হ্রাসের বিষয়েও বাস্তবসম্মত পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়াই সময়ের দাবি।