পাবলো নেরুদার কথাই ধরুন। আপন সময়ের প্রতিটি গুরুত্ববহ ঘটনাকে কবিতায় স্পন্দিত করে তিনি সময়ের গণমনের ইতিহাসকে নিজের মতো করে বিবৃত করেছেন। সোভিয়েত বিপ্লব, স্পেনের গৃহযুদ্ধ, নাজিবাদের উত্থান, স্টালিনবাদের রূপ ও ধরন, বিশ্বযুদ্ধ ও বীভৎসতা, ঠান্ডাযুদ্ধ ও পরাশক্তির ক্ষমতার নেশা, ভিয়েতনাম, কিউবা, লাতিন আমেরিকার রক্তপাত ও নবজাগৃতি তার কবিতায় চিত্ররূপ পেয়েছে। সাধারণ মানুষের নিত্যকার দিনলিপি উঠে এসেছে তার পঙ্ক্তিমালায়।
সাম্প্রতিক ভারতের রাজনৈতিক বাস্তবতা, সামাজিক সঙ্কট এবং গণমনের দুঃখ, বেদনা ক্ষোভ ও আবেগের ভাষাদানে রাহাত ইন্দুরীকে তুলনা করা যায় নেরুদার সাথে। জাতীয় জীবনে প্রতিটি গুরুত্ববহ ঘটনা ও এর ফলাফল ইন্দুরীর কবিতায় তীব্রভাবে প্রকটিত হচ্ছিল। নরেন্দ্র মোদি ও সঙ্ঘ পরিবারের চরম হিন্দুত্ববাদী অভিপ্রায়সমূহের জবাবী বয়ান ইন্দুরীর কবিতায় বিঘোষিত হতো। ফলে তার কবিতামাত্রই হয়ে উঠত ভারতের কোটি মানুষের অভিপ্রায়ের প্রতিবেদন। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিষ্টান সবাই তার উচ্চারণে শুনতে পেত নিজের ব্যথা, বঞ্চনা, স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার প্রতিধ্বনি। ক্ষমতাসীন বিজেপি ও মনুবাদী শক্তি বিরক্ত, বিব্রত ও বিক্ষুব্ধ হয়ে চোখ লাল করে প্রশ্ন করত, কোন অপশক্তির কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে রাহাতের কণ্ঠে? ইন্দুরীর কবিতা জবাব দিত, ‘আমার কণ্ঠে মূলত পরোয়ারদিগার কথা বলছেন।’ তারা তাকে শেখাতে এবং বলাতে চেয়েছে তাদের ‘সত্য।’ রাহাত বলেছেন না, ‘হামারে মুহ সে যো নিকলে ওহি সাদাকাত হায়’ আমাদের মুখ থেকে যা উচ্চারিত হচ্ছে, সত্য সেটাই। ‘হামারে মুহ মে তুমহারি জবান থুড়ি হে’ আমাদের কণ্ঠে তোমাদের ভাষা উচ্চারণের অবকাশ নেই। রাহাত এই নিজস্ব সত্য ও ভাষার উচ্চারণে ছিলেন অকুণ্ঠ। এ জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত ছিলেন। ঘোষণা করেছেন, ‘অতঃপর আমার জিহ্বা কাটতে চাইলে কেটে ফেলো। আমার যা বলার, প্রবল নিনাদেই বলব।’
কবিতা যখন গণস্তর থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন, রাহাতের পঙ্ক্তিমালা তখন প্রবাদের তীব্রতা নিয়ে জনপ্রিয় হয়। জাতীয় সংসদ থেকে নিয়ে গ্রামের হাট-বাজারে কিংবা খেলার মাঠে বালকের কণ্ঠেও উচ্চারিত হচ্ছিল তার অগ্নিশিখায়িত বহু চরণ। রাহাত প্রতিবাদী ভারতকে যুগিয়ে গেছেন লড়াইয়ের ভাষা, স্লোগানের আগুন, আত্মপরিচয়ের সোচ্চারতা, বিদ্রূপের বিষ এবং স্বৈরাচারের চোখে চোখ রেখে ‘তুই স্বৈরাচার’ বলার স্পর্ধা।
হিন্দুত্ববাদী প্রকল্প যে ভারতীয়দের ‘রাজনৈতিক মৃত’ অবস্থায় দেখতে চায় তারা রাহাতের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে উচ্চারণ করছে, ‘ওহ মুঝকো মুরদা সমঝ রহে হে/ উসকো কাহ দো, ম্যায় মরা নেহি হে।’ ওরা ভাবছে, আমাদের মেরে ফেলেছে, আমরা লাশ, তাদের জানিয়ে দাও, আমরা জীবিত আছি। এইসব মানুষ দেখেছেন, হিংসাশ্রয়ী সাম্প্রদায়িকতা তাদের মাথার উপর খড়গ নিয়ে হাজির। চার দিক থেকে তৈরি করেছে ভীতিকর পরিবেশ। রাহাতের কবিতায় তারা পান এ পরিস্থিতিতে নিজেদের প্রত্যয়ের প্রকাশ। তারা রাহাতকে উচ্চারণ করে বলেন, ‘ওহ গরদন নাপতাহে নাপ লে/ মগর জালিম সে ডর জানে কো নেহি।’ ওরা আমাদের গর্দান মাপছে জবাই করতে বা রশিতে লটকাতে। মাপুক। কিন্তু অত্যাচারীদের ভয় পাবার কিছু নেই।
শাসকগোষ্ঠী একের পর এক চ্যালেঞ্জ করছে ভারতের বিপুলসংখ্যক মুসলিম ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বসবাসের বৈধতাকে। বিশেষত মুসলিমদের আখ্যা দেয়া হচ্ছে পাকিস্তানি বা বাংলাদেশী হিসেবে। চলছে সীমান্তের ওপারে তাদের পাঠিয়ে দেয়ার তোড়জোড়। সিএএ, এনআরসি, এনপিআর সে প্রচেষ্টারই অংশ। দেশব্যাপী অগণিত মানুষ তাই আতঙ্কে কাতর, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে দেশত্যাগের হুমকি।
কিন্তু পূর্ব পুরুষের নাড়িপোতা মৃত্তিকা ছেড়ে কোথায় যাবে তারা? কেন যাবে? রাহাত তাই তাদের হয়ে বলেন, ‘দুনইয়া চুড়না মঞ্জুর/ লেকিন ওতন কো চুড় কর জানে কো নেহি।’ দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে রাজি আছি। কিন্তু স্বদেশ ছাড়তে রাজি নই। দিল্লির লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে লক্ষ জনতার সামনে ভারতের স্বাধীনতা দিবসে রাহাত অনেকবার আবৃত্তি করেছেন, ‘জো ফয়সালা হোগা, ওহ য়েহি পর হোগা/ হামসে আব দুসরে হিজরত নেহি হোনেওয়ালা।’ ফয়সালা যা হবার, এখানেই হবে, দ্বিতীয়বার দেশত্যাগ ও হিজরতের জন্য আমরা প্রস্তুত নই। সেই আবৃত্তির সাথে উপস্থিত হাজারো জনতার সাথে উত্তাল হয়ে উঠত ভারতের আত্মাও!
নাগরিক তথ্যপঞ্জির নামে নতুন করে নাগরিকত্ব প্রমাণের ভেতর গুরুতর হুমকি দেখছেন সাধারণ ভারতীয়রা। বিশেষত মুসলিমরা। দিল্লির শাহিনবাগে হাজার হাজার নারী জমায়েত হলেন প্রতিবাদে। দিনের পর দিন চলেছে অব্যাহত ধর্না। মহিলারা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন কোলের শিশুকে। স্কুল-পড়ুয়া থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সবাই আছেন। কুয়াশা ঘেরা দিন, কনকনে শীতের রাতে পারদ নামতে নামতে দুই ডিগ্রির ঘরে। শাসকদলের গু-ারা হামলা করেছে, দিচ্ছে হুমকি। সরকার ও তার অনুগত মিডিয়া চোখ রাঙাচ্ছে। জবাবে কী বলতে চান শাহিনবাগের নারীরা? জবাব লেখা ছিল অগণিত ফেস্টুন ও পোস্টারে। দশ বছরের শিশু থেকে নিয়ে নব্বই বছরের বৃদ্ধার হাতে। যাতে বেশির ভাগই শোভা পাচ্ছিল ইন্দুরীর কবিতা ‘সভি কা খুন হ্যায় শামিল ইয়াহাঁ কি মিট্টি মে। কিসি কে বাপ কা হিন্দুস্তান থোড়ি হ্যায়!’ এই ভূমিতে মিশে আছে সবার আত্মদানের রক্ত। কারো বাপের তালুক নয় এই দেশ!
কমেডিয়ান, গীতিকার বরুণ গ্রোভার ‘কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে’ শীর্ষক একটি কবিতা ছড়িয়ে দেন সামাজিক মাধ্যমে। অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গানটি। রাজপথের মিছিলে, হলরুমে, মহাসমাবেশে গীত হচ্ছিল এটি। অনূদিত হলো বিভিন্ন ভাষায়। বাংলায়ও। এর আবৃত্তিতে গলা মেলালেন সব্যসাচী চক্রবর্তী, অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, কঙ্কনা সেনশর্মা, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, চিত্রাঙ্গদা, তিলোত্তমা সেন ও রূপম ইসলামের মতো অগ্রগণ্য শিল্পীরা। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ মুখর হয়ে উঠলেন কবিতাটি নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়ায়। আলোচনা এগিয়ে গেল রাহাত ইন্দুরীর দিকে। কারণ বরুণ গ্রোভার জানান, কবিতাটি রচনা সম্পন্ন হয়েছে রাহাত ইন্দুরীর কবিতার অনুপ্রেরণায়। এর মূলে আছে রাহাতেরই কিছু পঙ্ক্তি।
ক্ষমতার লড়াইয়ের জন্য দীর্ঘ ৩৫ বছরের জোটসঙ্গী বিজেপির সাথে সম্পর্ক ছেদ করছে শিব সেনা। মহারাষ্ট্রে অ-বিজেপি সরকার গড়তে ‘চিরশত্রু’ কংগ্রেসের সাথেও হাত মিলিয়েছে বালাসাহেব ঠাকরের দল। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (ঈঅঅ) নিয়েও বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াল দলটি। শিব সেনার সাংসদ সঞ্জয় রাউত এই আইনের বিরোধিতায় ভাষণ দিলেন সংসদে। তার ভাষণে ছিল রাহাত ইন্দুরীর কবিতা। টুইট করলেন। সেটাও মূলত রাহাতের এক কবিতা।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র লোকসভায় ভাষণ দিলেন। সরকারের তুমুল সমালোচনা করলেন। সারা দেশে আলোচিত হয় সেই ভাষণ। মহুয়ার ভাষণের উপসংহারে ছিল রাহাত ইন্দুরীর কবিতা। কেন তাকে রাহাতের কবিতার সহায়তা নিতে হলো? এ প্রশ্নের জবাবে মহুয়া জানালেন, ‘এখন দেশে যা রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি, তাতে আমার মনে হয়েছিল ওঁর এই কবিতা এই সময়কে সঠিক ভাবে তুলে ধরতে পারবে। আমার ভাবনার সাথে ঠিকঠাক মিলে গিয়েছিল এই কবিতা।’
এই হচ্ছেন রাহাত ইন্দুরী। সময়কে সঠিকভাবে তুলে ধরা এবং প্রতিবাদী জনতার ভাবনার সাথে ঠিকঠাক মিলে যাওয়া তার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্য তাকে করে তুলেছিল আপন সময়ে উপমহাদেশের সবচেয়ে গণলগ্ন কবিকণ্ঠ। মোশায়েরাসমূহে তার উপস্থিতি ও আবৃত্তি গণমঞ্চে সঞ্চার করত প্রাণাবেগ। তিনি থাকতেন এর মধ্যমণি হয়ে। নিজেকে বলতেন গজলের ফকির। কিন্তু তার সময়ের সমালোচকরা তাকে আখ্যা দিয়েছিলেন উর্দু কবিতার শাহানশাহ!
বলিউডের প্রথম সারির ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’, ‘মিশন কাশ্মির’, ‘খুদ্দার’-এর গান তারই লেখা। গীতিকার হিসেবে গোটা ভারতে অগ্রগণ্যদের একজন ছিলেন। শৌখিন চিত্রশিল্পী ছিলেন। ছিলেন জনপ্রিয় শিক্ষক। ১৯৫০ এ মধ্যপ্রদেশের ইন্দুরে জন্ম নেয়া এ কবির নাম ছিল রাহাত কুরাইশী। উত্থান গ্রাম থেকেই। দরিদ্র মা-বাবার শেষ সন্তান ছিলেন তিনি। বাবা রফিকুল্লাহ কুরাইশী কাপড়ের কলে কাজ করতেন। পরিবারে অনেক সদস্য। কষ্টেসৃষ্টে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। গ্রামের স্কুলের পাঠ সেরে ইসলামিয়া করিমিয়া কলেজ ইন্দুরে পড়ালেখা। ভূপালের বরকতউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উর্দু সাহিত্যে মাস্টার্স করা হলো। এরই মধ্যে উর্দু কাব্যের স্বাদ তাকে করে ফেলে আচ্ছন্ন। যা তাকে অবশেষে এ পথেই এগিয়ে নিলো। ভোজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উর্দু মুশায়েরার ওপর ডক্টরেট করেন ১৯৮৫ সালে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে অধ্যাপনা করেন প্রায় দুই দশক। লিখেন রুট, ধুপ বহুত হায়, নারাজ, চান্দ পাগল হায়, মেরে বা’দ, দু কাদর ওর শাহি, মাওজুদ ইত্যাদি গ্রন্থ। আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, ওমান, পাকিস্তানসহ দুনিয়ার বহু দেশে আমন্ত্রিত হয়েছেন কবিতার জন্য। পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কার।
কিন্তু তার সবচেয়ে বড় পুরস্কার ছিল জনতার ভালোবাসা। অনেকেই তাকে দৈবদৃষ্টির অধিকারী মনে করত। কারণ তার চোখ নাকি আগামীকে দেখতে পায়। রাহাতের নানা কবিতাই এমন ধারণা ছড়িয়ে দিয়েছিল। ভারতে লোকসভা নির্বাচনের আগে পাকিস্তান সীমান্তে পুলওয়ামায় দেখা দিলো যুদ্ধাবস্থা। চরম উত্তেজনা। অনেকেই এর রহস্য যাচাই করতে নজর দিলো রাহাতের কাব্যে। দেখা গেল রাহাতের একটি পঙ্ক্তি হচ্ছেÑ ‘সরহদো পর বহুত তনাব হ্যায় কেয়া / কুচ পাতা করো চুনাও হ্যায় কেয়া? সীমান্তে এত উত্তেজনা কিসের! খোঁজ নিয়ে দেখো, ভোট আসছে কি না!। পুলওয়ামা কা-ের পর তার এই দু’টি লাইন টুইট করে কয়েকটি সংবাদ সংস্থা ও সাইট। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তুমুলভাবে ছড়িয়ে যায় লাইনগুলো। দেশীয় রাজনীতিতে এটি হাজির করে নয়া উত্তাপ। রাহাত জানান, কবিতাটি লেখা হয় বহু বছর আগে। যখন পুলওয়ামার দূরতম লক্ষণও ছিল না।
এত কিছুর পরেও রাহাত মূলত ছিলেন প্রেমিক। উদ্দাম লড়াইয়ের সাথে উদ্বেল প্রেম ছিল তার প্রয়োজন। তার ঘোষণা ছিল, ‘ফয়সালা যে কুচ হো মঞ্জুর হোনা চাহে/ জঙ্গ হো ইয়া ইশক হো ভরপুর হোনা চাহে’। সিদ্ধান্ত যেটাই হয়, সাড়া দেয়া উচিত। যুদ্ধ হোক আর প্রেম হোক পরিপূর্ণ হওয়া উচিত। প্রেমের ঝরণাধারায় ছিল তার নিয়ত গোসল। প্রেমময় হাতকে নিজের হাতে লগ্ন দেখতেই তিনি ছিলেন ব্যাকুল। তার প্রবাদপ্রতিম পঙ্ক্তি-‘সুরুয সেতারে, চান মেরে সাথ রহে/ যবকে তোমহারে হাত মেরে হাত রহে।’ সূর্য তারকা, চাঁদ সবই আমার সাথে থাকে। যদি লগ্ন থাকে আমার হাতে তোমার প্রিয় হাত।
তার কবিতা ফুল ও সুগন্ধির বাণিজ্য এবং সেই বাণিজ্যের আমন্ত্রণ। মুখে মুখে ব্যাপক উচ্চারিত তার এক পঙ্ক্তি হচ্ছে- ‘ফুলো কা দোকান খোলো, খুশবু কা বেপার করো/ ইশক খাতা হ্যায় তো, ইয়ে খাতা এক বার নেহি সো বার করো।’ ফুলের দোকান দাও, সুগন্ধির ব্যবসা করো, প্রেম যদি অপরাধ হয়, এ অপরাধ একবার নয়, একশ’ বার করো।
জীবনভর বিদ্রোহে জ্বলন্ত ইন্দুরী নিজেকে প্রেমিক হিসেবেই জানতেন ও জানাতেন। বন্ধুদের তিনি বলে রেখেছিলেন, ‘জানাজে পর মেরে লিয়ে লিখ দেনা ইয়ারো/ মোহব্বত করনেওয়ালা যা রাহা হ্যায়।’ বন্ধুরা, আমার জানাজার সময় কথাটি লিখে দিয়ো, যে লোকটি ভালোবাসত সে চলে যাচ্ছে।
ভালোবাসতে বাসতেই চলে গেলেন উপমহাদেশের এই জাগ্রত আত্মা। ১১ আগস্ট, ২০২০ করোনা কেড়ে নিলো সত্তর বছর বয়সী এ কবিকে। মৃত্যুর দিন অবধি থেকেছেন সচল, গতিমান ও সৃষ্টিশীল।
তিনি জানতেন, তার যা আছে, কিছুই সাথে থাকবে না। সবই একে একে চলে যাবে। কিন্তু একটি সম্পদ ও শক্তি তিনি হৃদয়ে লালন করতেন, যা কখনো বিদায় হবার নয়। সেটিই তাকে জীবনভর লড়াকু রেখেছে, মানুষের ভালোবাসায় আগুনের মুখোমুখি হতে শিখিয়েছে। শেষ অবধি সেটিই ছিল তার প্রেরণা ও সঙ্গী। কী সেই শক্তি? রাহাত জানাচ্ছেন, ‘মেরে আন্দর সে এক এক করকে সব কুচ হো গায়া রুখসত/ মগর এক চিজ বাকি হে, জিসে ঈমান কাহতে হে।’ আমার মধ্য থেকে ক্রমে ক্রমে সব কিছুই বিদায় নিয়েছে। কেবলই আছে এক প্রাণাধার, যাকে ঈমান বলা হয়।
রাহাতের সেই ঈমান কেবল ধার্মিকের বিশ্বাস নয়, সেটা একই সাথে মানুষ ও মানুষের পৃথিবীতে ন্যায় ও সত্যের প্রতি স্বার্থ ও শর্তহীন জীবন্ত অঙ্গীকার।
লেখক : কবি, গবেষক