শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:০০ অপরাহ্ন

রোমানার ফাঁদ: ২৮ স্বামীর ৩০ কোটি টাকা উধাও

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১
  • ১৬৫ বার

রোমানা ইসলাম স্বর্ণা। মডেল-অভিনেত্রী থেকে এখন প্রতারক। নিজেকে কখনো মডেল, কখনো অভিনেত্রী পরিচয় দিতেন। খুলতেন ভিন্ন ভিন্ন ফেসবুক আইডি। আপলোড করতেন রগরগে সব ছবি। এরপর প্রবাসীদের টার্গেট করে ফ্রেন্ড বানিয়ে গড়ে তুলতেন প্রেমের সম্পর্ক। এভাবে একে একে এ পর্যন্ত বিয়ে করেছেন ২৮ জনকে। হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৩০ কোটি টাকা। তবে তাদের কারো সাথেই সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। বিয়ের নামে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে বিদায় দিয়েছেন সবাইকে। এত দিন লোকলজ্জার ভয়ে প্রতারিতরা মুখ না খুললেও এবার মুক্তি মেলেনি এই মডেল কন্যার। প্রেম আর বিয়ে খেলায় এবার আটকা পড়েছেন আইনের জালে।

জানা গেছে বিয়ের নামে প্রতারণা করা ছিল স্বর্ণার নেশা। ১৫ সালের আগে তিনি প্রথম বিয়ে করেন। সে স্বামীর ঘরে একটি সন্তান জন্ম নেয়ার পর তাকে তালাক দেন। এরপর ২০১৫ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সে চাকরিকালীন পরিচয় হয় খোরশেদ আলম টুটুল নামের এক ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়ীর সাথে। এর পর সে বছরের জুন মাসে তিনি তাকে বিয়ে করেন। টুটুল ঢাকার যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা। রাজধানীর শান্তিনগরের একটি কাজী অফিসে করা এ বিয়ের দেনমোহর ছিল পাঁচ লাখ টাকা। টুটুলের এটি প্রথম বিয়ে হলেও স্বর্ণার এটি দ্বিতীয় বিয়ে ছিল।

এরপর একই বছরে একটি বিলবোর্ডের মডেল হয়ে মিডিয়ায় আলোচনায় আসেন স্বর্ণা। মডেলিং অভিনয়ে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় এয়ার লাইন্সের চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। সময়ের ব্যবধানে মুক্তি পায় তার অভিনীত একাধিক সিনেমা। এরই মধ্যে নানান প্রলোভনে টুটুলের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পর স্বামী হিসেবে তাকে অস্বীকার করেন।

পুলিশ বলছে, একই কায়দায় অসংখ্য মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন স্বর্ণা। মডেল পরিচয়ে প্রথমে ফেসবুকে প্রেম করতেন প্রবাসীদের সাথে।

কখনো স্বামীর সাথে ডিভোর্স আবার সংসারের আর্থিক সঙ্কটসহ নানা কারণ দেখিয়ে নিতেন টাকা। পরে করতেন বিয়েও। কৌশলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে লিখে নিতেন জায়গা-জমিও। এভাবে একে একে বিয়ে করেছেন ২৮টি। ‘আপত্তিকর’ ছবি দেখিয়ে প্রত্যেক স্বামীর সাথেই একই কায়দায় প্রতারণা করে তাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

পুলিশ বলছে, এই পরিবারের প্রতিটি সদস্যই বিপরীত লিঙ্গের সাথে একই প্রক্রিয়ার প্রেম ও বিয়ের সম্পর্কের অভিনয় করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি সদস্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ কাজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ঠিক একইভাবে কখনো ফ্ল্যাট কেনা আবার কখনো গাড়ি কেনার নাম করে রোমানা সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েলের কাছ থেকে এক বছরে বিভিন্ন সময়ে নেন আড়াই কোটি টাকা।

প্রতারিত হওয়া প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েল জানান, স্বর্ণা তার সাথে প্রথমে ভালো সম্পর্ক করে। এরপর লালমাটিয়ায় ফ্ল্যাট কেনার নাম করে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা নেয়। তিনি দেশে আসার পর তাকে বাসায় ডাকে। তিনি সেখানে গেলে তারা তাকে কিছুটা একটা খাইয়ে অচেতন করে ফেলে। এরপর খারাপ ছবি তুলে নেয় ও তার থেকে স্ট্যাম্পে সাইন নিয়ে নেয়। এভাবেই সে তাকে জোর করে বিয়ে করে।

এরপর বিয়ের জন্য দেশে এনে জুয়েলকে কিছুদিন নিজের বাসায় আটকে রাখেন রোমানা। এরপর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে রোমানা জোর করে স্ট্যাম্পে জুয়েলের স্বাক্ষর রেখে জায়গা-জমি হাতিয়ে নেন। এরপর রোমানাও জুয়েলকে ডিভোর্স দেন।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপির ডিসি হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, রোমানা, তার মা, তার ভাই ও ভাইয়ের বউ ও রোমানার ছেলে তারা সবাই এই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তিনি বিদেশ থেকে আসার পর বাসায় নিয়ে উলঙ্গ করে তার ছবি তুলে তারা। এরপর টাকা দাবি করে বসে। টাকা না দিলে সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com