বিশ্বজুড়ে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে। প্রতিবছর নতুন করে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এদের মধ্যে আবার ৬৫ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের আধুনিকতায় ৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া যায়, তা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী খুব দ্রুত তার স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে যেতে সক্ষম হন। আর যত দেরি হয়, ততই রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই স্ট্রোক হয়েছে- বোঝার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে হবে রোগীকে। আমাদের মস্তিষ্কে সব সময় অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহ হয়ে থাকে। যদি কোনো কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়, তা হলে মস্তিষ্কের কোষগুলো মরে যেতে থাকে অথবা স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে। তখন শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা দেয়। অনেক সময় শরীরের কোনো একটি অংশ প্যারালাইসিস হতে থাকে। এটিই হলো স্ট্রোক। স্ট্রোক মস্তিষ্কের সবচেয়ে জটিল রোগ। স্ট্রোক দুই প্রকার- ইসচেমিক ও হেমোরেজিক। ইসচেমিক স্ট্রোক হলো- মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে আঞ্চলিকভাবে কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হওয়া বা রক্ত চলাচলে কোনো কারণে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া। হেমোরেজিক স্ট্রোক হলো- মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রক্তনালিতে জমাট বেঁধে যাওয়া অথবা নালি ফেটে রক্ত মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়া। সাধারণত নারীদের তুলনায় পুরুষরা স্ট্রোকে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আমাদের দেশে সাধারণত ৮৫ শতাংশ ইসচেমিক স্ট্রোক হিসেবে বিবেচিত হয়। বাকি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হেমোরেজিক স্ট্রোক হয়ে থাকে। তাই ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রোগীর অপারেশনের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
স্ট্রোকের কারণ : স্ট্রোকের অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো- ট্রমা অথবা রোড অ্যাক্সিডেন্ট, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, রক্তে অতিরিক্ত চর্বির উপস্থিতি, অনিয়মিত খাবার গ্রহণ, অ্যালকোহলজাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া, ইনফেকশাস ডিজিজ থেকে হতে পারে ও জন্মগতভাবে প্যারালাইসিস হতে পারে।
স্ট্রোকের লক্ষণ : শরীরের একপাশ অথবা যে কোনো অংশ অবশ হতে পারে। কোথাও জড়তা অথবা কথা বলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। চোখে ঝাপসা দেখা অথবা একটি জিনিস দুটি দেখতে পারে। শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে কষ্ট হবে। হঠাৎ প্রচ- মাথাব্যথা অথবা বমি ভাব হতে পারে। ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে। অনেক সময় রোগীর খিঁচুনি হতে পারে। জ্ঞান হারিয়েও ফেলতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি : স্ট্রোক করার চার ঘণ্টার মধ্যে যদি একজন বিশেষজ্ঞ নিউরোলজিস চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন, তা হলে খুব দ্রুত রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব। প্যারালাইসিসের সঠিক চিকিৎসা হলো-
পুনর্বাসন চিকিৎসা : আধুনিক চিকিৎসায় আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় রোগীকে ফিরিয়ে আনতে পারি। ৯৮ শতাংশ এই চিকিৎসার জন্য রোগীর গার্ডিয়ানদের দুটি দিক ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে এবং গুরুত্বসহকারে দুটি চিকিৎসা একসঙ্গে চালাতে হবে। মেডিসিন ও জিওথেরাপি- এ দুই চিকিৎসার সমন্বয়ে রোগী আবার তার আগের অবস্থায় স্বাভাবিক জীবনে খুব দ্রুতই ফিরে যেতে পারে। একজন নিউরোমেডিসিন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত কিছু ওষুধ সেবন করতে হবে। একই সঙ্গে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। তবেই রোগী তার স্বাভাবিক জীবনে খুব তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে সক্ষম হবেন। করোনার কারণে যাতে স্ট্রোক না বাড়ে, এ জন্য সতর্কতা জরুরি।
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট ফিজিওথেরাপি রি-অ্যাকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার