বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর পুরো অক্টোবর ‘বিশ্ব স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস’ হিসেবে পালিত হলেও ১০ অক্টোবর দিনটি বিশেষভাবে পালন করা হয়। আজ ‘বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম ও রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ‘ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮১’-এর যৌথ উদ্যোগে দেশব্যাপী পালন করা হচ্ছে ‘স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস’। আহ্বান জানানো হয়েছে- ‘গোলাপি পোশাক অথবা গোলাপি ফিতা ধারণ করুন। আপনার কর্মস্থল কিংবা বাসভবন সাজিয়ে নিন গোলাপি আভায়’। ক্যানসারজনিত মৃত্যুর কারণ হিসেবে স্তন ক্যানসারের অবস্থান দ্বিতীয়। শীর্ষে রয়েছে ফুসফুসের ক্যানসার।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের স্থান শীর্ষে। আক্রান্তের হার বছরে ৮ শতাংশেরও বেশি। অথচ একটু সচেতন হলে শুরুতেই স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা যায় এবং স্তন না কেটে বা না ফেলে ও স্তন ক্যানসার নিরাময় সম্ভব। এটি একটি নীরব ঘাতক। সঠিক সময়ে শনাক্ত হলে এর প্রতিকার সম্ভব। শরীরের অন্যান্য স্থানের মতো স্তনে অস্বাভাবিক কোষ বাড়ায় চাকা বা পি-ের সৃষ্টি হলে তার নাম টিউমার। বিনা প্রয়োজনে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন থেকে এটির সৃষ্টি। প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্তন টিউমার দুধরনের। এর একটির নাম বিনাইন এবং আরেকটির নাম ম্যালিগন্যান্ট।
বিনাইন : এ টিউমার ক্ষতিকর নয়। উৎপত্তিস্থলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। দূরের বা কাছের অন্য কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত করে না।
ম্যালিগন্যান্ট : এ টিউমার আগ্রাসী এবং ক্ষতিকর। উৎপত্তিস্থলের সীমানা ছাড়িয়ে আশপাশের অঙ্গ-প্রতঙ্গ কিংবা গ্রন্থি (মষধহফ) আক্রান্ত করে। এমনকি রক্তপ্রবাহ বা লসিকা প্রবাহের মাধ্যমে দূরের কোনো অঙ্গেও আঘাত হানতে পারে।
স্তনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার : এটিই স্তন ক্যানসার। শুরু হয় স্তনের দুধনালি থেকে এবং তা স্তনের মেদযুক্ত অংশে ছড়িয়ে পড়ে। একটি পি- বা চাকা হিসেবেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি ধরা পড়ে। ক্রমে বড় হয় এবং লসিকানালির মাধ্যমে প্রথমে বগলতলায় (অীরষষধ) এবং পরে শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।
লক্ষণ : স্তনে চাকা বা গোটা; স্তনের বোঁটা বা নিপল ভেতরে ঢুকে যাওয়া; বোঁটা দিয়ে রক্তক্ষরণ বা অস্বাভাবিক রস নিঃসরণ; চামড়া কমলালেবুর খোসার মতো হওয়া; বগলতলায় চাকা দেখা দেওয়া ইত্যাদি। তবে মনে রাখতে হবে, ব্যথা দিয়ে স্তন ক্যানসার মোটেও শুরু হয় না।
প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যানসার নির্ণয় : লক্ষণ দেখা দিলে জরুরিভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা (ঋঘঅঈ) বা বায়োপ্সি করা। যাদের লক্ষণ নেই, কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছেন, তাদেরও ক্যানসার স্কিনিং করা জরুরি। মনে রাখতে হবে, প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে স্তন ক্যানসার প্রায় শতভাগ নিরাময় সম্ভব। এ ক্ষেত্রে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতিমাসে একবার, মাসিক ঋতুস্রাব শেষ হওয়ার একদিন পর এবং ঋতুস্রাব বন্ধ নারীদের ক্ষেত্রে প্রতিমাসে একবার নির্ধারিত একই তারিখে নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন স্তনে কোনো অস্বাভাবিক পি- ধরা পরে কিনা। অস্বাভাবিক কোন পরিবর্তন ধরা পড়লে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
লেখক : ব্রেস্ট, খাদ্যনালি ও কলোরেক্টাল ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সার্জন