শিশুর শরীরের যে অংশ ডায়াপার অর্থাৎ জাঙ্গিয়া বা ল্যাঙটি দিয়ে ঢাকা থাকে, সেই অংশে যে অ্যাকজিমা হয়, তার নাম ডায়পার অ্যাকজিমা।
লক্ষণ : সংশ্লিষ্ট অংশের ত্বক লালচে হয়ে যায়, তার মধ্যে ছোট ছোট গুটি বা ফোস্কা বেরোয়। পেটের তলার দিকে, যৌনাঙ্গে, ঊরুর ওপরের অংশ এবং পাছা ডায়াপারে ঢাকা থাকে। ফলে আক্রান্ত শিশুদের শরীরের যে অংশ ডায়াপার অর্থাৎ জাঙ্গিয়া বা ল্যাঙটেয় ঢাকা থাকে, সেখানে এই অ্যাকজিমা হয়ে থাকে। ফলে আক্রান্ত অংশ ওই এলাকাগুলোয় সীমিত থাকে। ঊরু ও পেটের সন্ধিস্থল, পাছার মাঝখানে যে খোঁজ, সেই অংশে এ অ্যাকজিমা হয় না। কারণ ডায়াপার এ অংশে ত্বকে সরাসরি লেগে থাকে না। সোরিয়াসিস বা মোনিলিয়াসিস রোগে এ খাঁজগুলোও আক্রান্ত হয় এবং এ থেকে সহজেই এদের অ্যাকজিমা থেকে পৃথক করা যায়।
যেসব কারণে হয় : রাতে যেসব শিশুর ডায়াপার পাল্টানো হয় না, সেসব শিশুই ডায়পার ডার্মাটাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়। কেননা ডায়াপার না পাল্টালে ডায়াপারের ভেতরে পায়খানা-প্রস্রাব জমে ওঠে। পায়খানা থেকে এক ধরনের জীবাণু প্রস্রাবের ইউরিয়া ভেঙে অ্যামোনিয়া তৈরি করে। ওই অ্যামোনিয়া আবার ক্ষারীয় বিক্রিয়ার মাধ্যমে ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি করে। ডায়াপার চর্মপ্রদাহের সঙ্গে অনেক সময় শিশুদের লিঙ্গমুখও আক্রান্ত হয়ে থাকে, শিশু বারবার প্রস্রাব করে, অনেক সময় ডায়াপারের গায়ে রক্তবিন্দুও লেগে থাকতে দেখা যায়। ডায়াপার চর্মপ্রদাহের ওপর আবার প্রায়ই ক্যানডিডা বা মোনিলিয়া ছত্রাক বিস্তার লাভ করে। ফলে রোগ আরও জটিল হয়ে ওঠে।
যাদের হয় : শিশুদের ক্ষেত্রেই নয়, বড়রাও এ ধরনের চর্মপ্রদাহ সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। অবশ্য এর কারণ একেবারেই আলাদা। টয়লেটের সিটে (কমোড জাতীয়) বসার ফলে তার রঙ, প্লাস্টিক বা অনেক সময় সিট ধোয়ায় ব্যবহৃত সাবান বা ব্লিচিং পদার্থ লেগে ত্বকে প্রদাহ হয়। এর নাম টয়লেট সিট চর্মপ্রদাহ। এভাবেই বড়রা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
পরামর্শ : সময়মতো ডায়াপার পাল্টালে, মলমূত্র পরিষ্কার করলে এবং নিয়মিত পাউডার লাগালে সাধারণত এ রোগ হয় না। কাপড়ের ডায়াপার বহুক্ষণ পানিতে ধুতে হয়, যাতে সাবানের লেশমাত্র ক্ষারও তাতে লেগে না থাকে। ইদানীং বাজারে প্লাস্টিক ডায়াপারের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশের এ ডায়াপার অবশ্যই ক্ষতিকর।
লেখক : চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ