লিউকোরিয়ার আভিধানিক অর্থ শ্বেতস্রাব। এ স্রাব যখন নারীর যোনিপথে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ও ঋতুচক্রের বেশিরভাগ দিনে থাকে এবং অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করে, এ অবস্থার নামই লিউকোরিয়া। স্ত্রী যোনিপথে শ্বেতস্রাব থাকলেই তা লিউকোরিয়ান্ট পর্যায়ে পড়ে না। কারণ ঋতুস্রাবের কয়েক দিন আগে ও স্রাবকালে ঋতুচক্রের অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি যোনিপথ সিক্ত হয়ে ওঠে। এটি স্বাভাবিক শ্বেতস্রাব। এজন্য চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না।
স্বাভাবিক স্রাব : স্ত্রী যোনিপথের স্বাভাবিক সিক্ততা রক্ষিত হয় স্ত্রী-জননেন্দ্রিয়ের (জরায়ু গহ্বর, জরায়ুমুখ, যোনিপথ) নিঃসরণের মাধ্যমে। এ ছাড়া যৌনমিলনকালে যোনিপথে যে বাড়তি রস ক্ষরণ হয়, তা নিঃসৃত হয় বার্থোলিন গ্রন্থি থেকে। স্ত্রী-যোনিপথের রস ক্ষরণ হলো অম্লধর্মী। এ কারণে যোনিপথের সুস্থতা বজায় থাকে। আমাদের শরীরে কিছু সংখ্যক হিতকারী জীবাণু আছে, যেগুলো ধ্বংস হলে প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী তৈরি হয় না। যেমন- অন্ত্রনালিতে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স। স্ত্রী-যোনিপথের স্বাস্থ্যরক্ষায় এমন একটি জীবাণু হলো ডডারলেন জীবাণু। এটির মাধ্যমে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হয় এবং জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব হয়।
জরায়ু-উদ্ভূত স্বাভাবিক যৌনস্রাব ও যোনিপথ-উদ্ভূত স্রাবের মধ্যে যেমন পার্থক্য আছে, তেমনি যারা সন্তানের জননী হয়েছেন-এমন নারী ও যারা গর্ভবতী হননি, এমন নারীর স্বাভাবিক যোনিস্রাবের মধ্যেও পার্থক্য আছে। জরায়ু-উদ্ভূত স্রাব হলো শ্লেষ্মাজাতীয়। যোনিপথে-উদ্ভুত স্রাব তা হয় না। সন্তানের জন্মদানের পর যোনিস্রাব অপেক্ষাকৃত তরল হয়ে পড়ে।
বয়স ও যৌনজীবন অনুযায়ী যোনিস্রাব : অবিবাহিতা, কম বয়সী কুমারীর শ্বেতস্রাবের আগমন হয় প্রধানত জরায়ুমুখ থেকে এবং স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে একটু বেশি পরিমাণে স্রাব হয়। সাধারণত এমন মেয়েদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে না এবং স্বাস্থ্য ভালো হলেই শ্বেতস্রাব সহজে দূর হয়। যৌনমিলনে অভ্যস্ত ঋতুবন্ধপূর্ব সন্তানের জননীর শ্বেতস্রাবের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায় প্রসব-পরবর্তী জরায়ুমুখের ক্ষয়ক্ষতি। সাধারণত এ ধরনের শ্বেতস্রাব পুরনো হয়ে থাকে।
ঋতুবন্ধ-পরবর্তী নারীর যোনিপথ সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে খুব বেশি সক্ষম থাকে না। এ কারণে সহজেই যোনিপথে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং যোনিপথের এ সংক্রামিত অবস্থা ক্রমে জরায়ু আক্রমণ করে। ফলে কয়েক দিন পর পর দুর্গন্ধযুক্ত শ্বেতস্রাব দেখা দেয়। ঋতুবন্ধের সময় নারীর ডিম্বকোষ থেকে যৌবনকালীন ইস্ট্রোজেন নামক স্ত্রী হরমোনের ক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়। এ বয়সী নারীর জরায়ু গহ্বর এবং জরায়ুমুখে ক্যানসার রোগের আক্রমণের প্রবণতার কথাও মনে রাখতে হবে। ক্যানসার জাতীয় হলে স্রাবে অন্যান্য লক্ষণের সঙ্গে অসহনীয় দুর্গন্ধ অবশ্যই থাকবে।