আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি ও যুক্তিকে দেয়া যায় না আল্লাহকে পুরোপুরি বয়ানের দায়িত্ব। কারণ যে আমরা সৃষ্ট, তাদের সৃষ্ট যুক্তিপ্রণালী কীভাবে ধারণ করবে তাকে, সৃষ্টির কোনো কিছুতেই যার প্রতিতুলনা নেই?
প্রকৃতিবিজ্ঞানও পারবে না তাকে পুরোপুরি বুঝাতে। কারণ সীমিত প্রকৃতি কীভাবে বয়ান করবে তাকে, যে সীমার উর্ধ্বে? বিশ্বজগত কীভাবে তাকে বুঝাবে, যিনি বিশ্বজগতের একজন নন?
সময় ও স্থান কীভাবে তাকে বুঝাবে, যিনি সময় ও স্থানের অধিন নন? সময়কে তিনি সৃষ্টি করেছেন সময়ের প্রয়োজন ছাড়া, স্থানকে তিনি সৃষ্টি করেছেন স্থানের প্রয়োজন ছাড়া।
তারা কেবল পারে তার নিদর্শনকে বুঝতে। যে নিদর্শন মানুষের চিরায়ত অনুভবে পল্লবিত, চিরহৃদয়ে জাগ্রত, অভিজ্ঞতার পরিসরে ব্যাপ্ত, নিখিলের চরাচরে বাকমুখর।
সেই মুখরতার শব্দাবলী শুধু শব্দ হয়ে নয়, নৈশব্দেও কথা বলছে। বলছে, আল্লাহর অস্তিত্ব স্বত:স্ফূর্ত সত্য, সহজাত বাস্তবতা!
আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ কী? প্রাচীন আরবের এক বেদুইন প্রশ্নটির জবাব পেয়েছেন প্রকৃতিনির্ভর যুক্তিবাদের সারল্যে।
তিনি বললেন, উটের বর্জ্য প্রমাণ করে উটের অস্তিত্ব। গাধার বর্জ্য জানায় গাধার অস্তিত্বের বার্তা। পায়ের দাগ বলে দেয় কেউ হেঁটে গেছে। অতঃপর, কক্ষপথসম্পন্ন আকাশ, বিচিত্র পথে সজ্জিত জমিন, তরঙ্গকল্লোলিত সাগর প্রজ্ঞাময় স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ না হওয়ার কোনো কারণ নেই ।
তর্কপ্রিয়তায় যারা নিমজ্জিত, তারা বলবেন, প্রমাণটি প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষ। কিছু আলামতের উপর ভর করে ধরে নেয়া হচ্ছে স্রষ্টার থাকা বাস্তব। কিন্তু পরোক্ষ প্রমাণ কি প্রমাণ নয়?
মানুষের জ্ঞান এখন ম্যাক্রোকসমিক লেভেলে; অতিক্ষুদ্র মহাজাগতিক স্তরে। আগে যে পরমাণুকে মনে করা হতো অখন্ড, ভাঙ্গন-বিরোধী, সেই পরমাণু ভেঙ্গে এখন খণ্ড-বিখণ্ড। এখন অসংশয় বাস্তব হয়ে উঠেছে ওয়াবেস; সেই সব তরঙ্গ, যাকে না দেখা যায় চোখে, যা না আসে কোনো মাপযন্ত্রের আওতায়। অপ্রত্যক্ষ এই বাস্তবতা শতাব্দী আগেই যুক্তি ও প্রমাণ পদ্ধতিকে দিয়েছে বদলে।
বিজ্ঞান বলছে, মহাবিশ্বের কোন কিছুরই সর্বশেষ প্রকৃতি সরাসরি জানতে পারে না মানুষ। সে কেবল পারে কোন জিনিসের প্রভাব বা ফলাফল দেখে তার অস্তিত্বের সম্ভাবনা বা নিশ্চয়তায় উপনীত হতে। বিজ্ঞানে এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় পরোক্ষ প্রমাণ।
পরোক্ষপ্রমাণের ব্যবহার এখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির এক অগ্রসর প্রয়োগ। মরুভূমির বেদুইন সহজাত প্রজ্ঞায় যাকে ধরতে পেরেছিলো।
এই প্রজ্ঞা স্বত:স্ফূর্ত। একটি বিজন দ্বীপে একটি শিশুকে রেখে আসুন। সে বড় হোক। ভাবতে ও বিচার করতে শিখুক। বিশ্বনিখিলের বিদ্যমানতার পেছনে সেও আপন প্রক্রিয়ায় এক স্রষ্টার অস্তিত্বের সাক্ষ্য দেবে।
যে সাক্ষ্য সে শুনতে পায় হাওয়ায়, পড়তে পারে গাছের পাতায়-ফলে-ফুলে, তরঙ্গের উচ্ছ্বাসে কিংবা ধুলার বিস্তারে।
লেখক: কবি, গবেষক, চেয়ারম্যান, ইসলামিক হিস্ট্রি এন্ড কালচার অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ