একটি খালি জায়গা। আপনি দেখেছেন পাথর। সে কীভাবে এখানে এলো? জবাবে হয়ত বলবেন, প্রাকৃতিক কারণে এমনিতেই পাথরটি এখানে এসেছে।
কিন্তু উইলিয়াম প্যালে (১৭৪৩-১৮০৫) তুলছেন একটি ঘড়ির কথা। কোথাও নির্জন মাঠে পাওয়া গেলো ঘড়িটি। সে কীভাবে সেখানে গেলো? কীভাবে তৈরি হলো? তা কি এমনিতেই, প্রাকৃতিক কারণেই?
অনেকগুলো যন্ত্রপাতি জড়ো হয়েছে আর ঘড়ির আকার নিয়ে ঘড়ির কাজ শুরু করেছে। তার স্টিলের তৈরি কাঁটা, সেগুলোর পরিমাপ এবং অবস্থানের নির্দিষ্ট মাত্রা ও স্থান, সেগুলো রক্ষার জন্য ঘড়ির উপরিভাগে পাত, সেটা আবার কাঁচের তৈরী, যেন কাটাগুলো দেখা যায়।
কোন কাঁটা কি গতিতে ঘুরবে তারও সুনির্দিষ্ট মাত্রা, স্টিলের তৈরি চেইন, সবকিছুই পরিমিত এবং কাজ করছে যথাযথ … ঘড়িটি এমনে এমনেই হয়ে যায়নি, দৈবক্রমে তার যন্ত্রপাতি এমন সংগঠন ও যথাযথ অবয়ব পায়নি, ক্রিয়াশীলতা পায়নি। সবাই স্বীকার করবেন। হাজার জনের সবাই, লক্ষ জনের সবাই।
কেন বলবেন? যেহেতু তারা সবসময় জেনে আসছেন আর দেখে আসছেন, ঘড়ি কারো দ্বারা তৈরি হয়, এটি বলবেন ডেভিড হিউম। চাইবেন দেখাতে, এটি নিছক মানবঅভিজ্ঞতার বয়ান। কিন্তু কেন বিপরীত অভিজ্ঞতা হয় না মানুষের?
নির্মাতা ছাড়া সুন্দর ও সক্রিয় ঘড়ি তৈরি হতে কেন দেখছে না মানুষ? কেন দেখেনি কোনোকালে?
আসেন, আরেকটি মহাঘড়ি দেখি। বিশ্বপ্রকৃতি। এর একেক প্রাণিদেহে আছে ঘড়ির চেয়ে লক্ষ কোটিগুণ জটিল বিন্যাস। এককোষী জীব থেকে নিয়ে উদ্ভিদজগত, কীটপতঙ্গ থেকে নিয়ে সামুদ্রিক প্রাণি, পাখি থেকে নিয়ে মানুষ; বিপুলা জীবনে দুনিয়া ভরপুর।
মানুষের দেহটি অগণিত প্রাণের আবাস। অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে ত্বকের দিকে তাকান। কতো অসংখ্য জীবিত সৃষ্টিই সেখানে দিব্যি বেঁচে-বর্তে আছে। খালি চোখে তাদেরকে দেখা অসম্ভব।
তারা কে, কী তাদের পরিচয়, কেমন তাদের কাজ আপনি জানেন না। তারা জীবন যাপন করছে আপনার শরীরে। জীবন যাপনকারী প্রত্যেকের জীবনঅন্ত্রে আছে লক্ষ লক্ষ ব্যাকটেরিয়া বা এককোষী জীব।
একমুঠো মাটির কথা ভাবুন। এতে আছে বিচিত্র গুণ ও বৈশিষ্টের বিপুল সংখ্যক প্রাণি। দুনিয়াজুড়ে লক্ষ লক্ষ বর্গকিলোমিটারে কতো কোটি কোটি জীব ছড়িয়ে আছে, খাচ্ছে-দাচ্ছে, সুস্থতা-অসুস্থতা পার করছে, জন্মাচ্ছে-মরছে, প্রণয় ও সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে, তাদের খাবার আলাদা, জীবনপ্রণালী আলাদা।
প্রত্যেকের রয়েছে স্বতন্ত্র বডি-সিস্টেম। প্রত্যেকেই প্রত্যহ কাজ করে যাচ্ছে এবং পৃথিবীতে নিশ্চিত করছে ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স- প্রাকৃতিক ভারসাম্য।
এদের কেউই নিজেকে সৃষ্টি করেনি। তাদের জীবন ও মরণকে নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করে না। তাহলে কে বানালো তাদের? কে পরিচালনা করছে বিশাল, বিচিত্র এই জীবনায়োজন?
বাতাসে আরো বেশি প্রাণ, পানিতে আরো বেশি জীবন। অন্যসব গ্রহে কী আছে, সে অনুসন্ধান আরো দূরের!
আমরা এই পৃথিবীতে থাকছি। এখানে, পৃথিবী গোলকের পুরুত্ব, সূর্য থেকে তার অবস্থান, দূরত্ব, জীবন দায়িনী সূর্যতাপ ও আলো বিচ্ছুরণের মাত্রা, ভূপৃষ্ঠের ঘণত্ব (Thickness), পানীয় পরিমিতি, কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ, নাইট্রোজেনের ঘণত্ব- সবই সুনির্দিষ্ট পরিমাপ এবং পরিমান অনুসারে রয়েছে।
একটি মহাঘড়ি; সুন্দর ব্যবস্থাপনার মধ্যে বিপুল, বিচিত্র জীবনবিন্যাসময় মহাবিশ্বকে নিয়ে কাটায় কাটায় চলছে।
কেউ না বানালে আর না চালালে ঘড়িটা সৃষ্টি হতো? পরিচালিত হতো?
লেখক: কবি, গবেষক, চেয়ারম্যান, ইসলামিক হিস্ট্রি এন্ড কালচার অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ