তরুণ লেখক, পড়ুয়া, মেধাবী। আসে প্রায়ই। ভালো লাগে তার তেজিয়ান ভাব।
সেদিন বললো, আমি বিশ্বাসী। কিন্তু বিশ্বাসের যে আর্গুমেন্টগুলো, তাতে প্রশান্তি পাই না। স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি অসম্ভব, বৈজ্ঞানিক বিচারে এটা অনেক সময় কথার কথা মনে হয়।
বললাম, একসময় অবিশ্বাসীরা বলতেন এটা কথার কথা। অবৈজ্ঞানিক। বলতেন, কারণ বৈজ্ঞানিক বহু সত্য তখন প্রতিষ্ঠা পায়নি। এখন এটা প্রতিষ্ঠিত যে, বিজ্ঞানের চোখে আল্লাহকে দেখা যায়। মানে তার বিদ্যমানতাকে দেখা যায় প্রমাণসমূহে।
আমি তো আল্লাহর প্রমাণ পাই আমার মধ্যে, তোমার মধ্যে, এমনকি আমরা যে খাচ্ছি, এই আমিষ উপাদানে।
সে বললো, আমিষ উপাদানেও? এ আপনার বিশ্বাস, বিজ্ঞানের সত্য নয়।
আসলে এটা যে বিজ্ঞানের গুরুতর এক প্রসঙ্গ, এ অনেকের কাছে স্পষ্ট নয়। একটি আমিষ উপাদান বা প্রোটিন অব্যাহতভাবে বলে চলছে, আল্লাহ ছাড়া আমার অস্তিত্ব অসম্ভব।
কীভাবে? ব্যাখ্যা করা যাক।
আমিষ উপাদান বা প্রোটিনে থাকে অসংখ্য অণু। সকল প্রাণময় জীবনকোষের অপরিহার্য উপাদান আমিষে থাকে আর থাকে পাঁচটি মূল উপাদান – অংগারক, উদযান, যবক্ষার-যান, অম্লযান ও গন্ধক। আমিষের একটি মাত্র ভারি অণুতে থাকা সম্ভাব্য পরমাণুর সংখ্যা ৪০,০০০ ।
কেউ যদি আমিষের একটি অণু বানাতে চায়, তাকে যে পরিমাণ পদার্থ নাড়াচাড়া করতে হবে, তার পরিমাণ সমগ্র পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ – কোটি গুণ বেশি। কেবল এ জগতের উপাদান দিয়ে আমিষের একটি অণুর অনুরূপ অণু সৃষ্টি করতে যে সময় লাগবে, জীব ও পদার্থ বিজ্ঞানি ফ্রাঙ্ক এ্যলেন দেখিয়েছেন- এ সময়ের পরিমাণ সীমাহীন লক্ষ-কোটি বছর।
এখানেই শেষ নয়। এই অণু সৃষ্টির প্রক্রিয়ার মধ্যে যে যোগসূত্র রয়েছে, সবগুলো সূত্রকে একত্রিত করার সুযোগ পেতে সীমাহীন লক্ষ লক্ষ বছরের প্রয়োজন পড়বে। গাণিতিক রসায়ন বিজ্ঞানি জন ক্লীভর্যান্ড কথরাল প্রমাণ করেছেন, সে সুযোগ পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
কিন্তু ধরে নাও সে সুযোগ পাওয়া গেলো। কেউ একটি অণু বানিয়ে নিলো। বিজ্ঞান বলে, সে অণু হবে প্রাণহীন। কারণ রাসায়নিক পদার্থ হিসেবে সকল আমিষ উপাদানই প্রাণহীন।
রহস্যময় প্রাণ কোত্থেকে আসে, কীভাবে আসে, বিজ্ঞান তার ব্যাখ্যা করতে পারেনি আজো।
তাহলে আমিষ উপাদানের মাত্র একটি প্রকারের একটি জীবিত অণু সৃষ্টিতেই জগতবাসী যখন অক্ষম, তখন কোটি কোটি অণু কে সৃষ্টি করছেন? প্রতিনিয়ত অসংখ্য অগণিত নতুন নতুন অণু কার মাধ্যমে অস্তিত্বে আসছে?
এ প্রশ্নে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করা ছাড়া বিজ্ঞানীর কাছে কোনো সন্তুষজনক জবাব আছে কি?
লেখক: কবি, গবেষক, চেয়ারম্যান, ইসলামিক হিস্ট্রি এন্ড কালচার অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ