সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন

সাধারণ সর্দি-জ্বরে কোভিড থেকে সুরক্ষা মিলবে!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২২
  • ২০৩ বার

সাধারণ সর্দি-জ্বরে মানবদেহে যে স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়, তা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধেও কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে বলে ধারণা পাওয়া গেছে এক গবেষণায়। নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাভাবিক ঠাণ্ডা-সর্দি থেকে সেরে ওঠার পর যাদের শরীরে নির্দিষ্ট কিছু সুরক্ষা কোষের বিষয়ে ‘স্মৃতি ভাণ্ডার’ গড়ে উঠেছে, তাদের কোভিড হওয়ার ঝুঁকি কম।

বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই গবেষণা চালানো হয়েছে একেবারেই ছোট পরিসরে। মোট ৫২ জনের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়েছে, যারা কোনো কোভিড-১৯ আক্রান্তের সঙ্গে একই বাসায় ছিলেন, কিন্তু নিজেরা আক্রান্ত হননি।

গবেষকেরা বলছেন, জ্বর-সর্দি থেকে পাওয়া সুরক্ষা যদি সত্যিই কোভিডে কার্যকর হয়, তারপরও শুধু এর ওপর নির্ভর করার কথা ভাবা ঠিক হবে না; এখন পর্যন্ত টিকাই এ ক্ষেত্রে কিছুটা নির্ভরযোগ্য উপায়। তবে মানবদেহের সুরক্ষা ব্যবস্থা ভাইরাস ঠেকাতে কীভাবে কাজ করে, সে বিষয়ে এই গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসেছে বলেই তাদের ধারণা।

এক ধরনের করোনাভাইরাস থেকে কোভিড-১৯ রোগ হয়। আবার অন্য ধরনের করোনাভাইরাস সাধারণ কিছু ঠাণ্ডা-সর্দির জন্য দায়ী। তাই বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, এক ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি আদৌ অন্য ধরনের করোনাভাইরাস ঠেকাতে সহায়ক হতে পারে কিনা।

কিছু লোক কেন এ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসামাত্র কোভিডে আক্রান্ত হন, আবার কিছু লোক কেন সংক্রমিত হন না, তা আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছেন লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের এই গবেষক দল। গবেষকরা তাদের মনোযোগ নিবদ্ধ করেছেন দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ টি-সেলের ওপর। কিছু টি-সেলের কাজ হলো একটি নির্দিষ্ট ভাইরাসে সংক্রমিত কোষ শনাক্ত করে সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া-যেমন ঠান্ডার জন্য দায়ী কোনো ভাইরাস।

একবার ঠান্ডা সেরে গেলে, কিছু টি-সেল শরীরে থেকে যায় স্মৃতি ভাণ্ডার হিসেবে। তাতে ওই নির্দিষ্ট ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শরীরে প্রস্তুত থাকে, পরের বার ওই ভাইরাস শরীরে এলে তার বিরুদ্ধে লড়াই করে।

লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের এই গবেষক দল গত বছর সেপ্টেম্বরে ৫২ জনের ওপর এই গবেষণা চালান, যারা তখনো টিকা নেননি, কিন্তু এমন ব্যক্তিদের সহচর্যে ছিলেন, যাদের মাত্রই কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে।

২৮ দিনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ওই দলের অর্ধেক কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন এবং বাকি অর্ধেকের কোভিড হয়নি। কোভিড না হওয়া দলের এক-তৃতীয়াংশের দেহের রক্তে উচ্চ মাত্রায় সুনির্দিষ্ট টি-সেলের স্মৃতি ভাণ্ডার পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই স্মৃতি ভাণ্ডারের টি-সেলগুলো তৈরি হয়েছিল আগে কোনো এক সময়ে, যখন ওইসব ব্যক্তি আরেক ধরনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন; বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যা সাধারণ সর্দি-ঠান্ডার ভাইরাস।

ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের অধ্যাপক ড. সিমন ক্লার্ক বলেন, এই গবেষণা স্বল্প পরিসরে পরিচালিত হলেও এটা আমাদের দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে সে বিষয়ে নতুন তথ্য যোগ করেছে এবং ভবিষ্যতে টিকা তৈরিতে এটা সহায়ক হতে পারে। তবে তিনি এটাও বলছেন, এই গবেষণার তথ্য নিয়ে অতিকথন ঠিক হবে না। যারা কোভিডে মারা গেছেন, বা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাদের কখনো করোনাভাইরাস বাহিত সর্দি-কাশি হয়নি- এমন ভাবার সুযোগ নেই।

ওই গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক অজিত লালভানিও স্বীকার করেছেন, কোভিড থেকে সুরক্ষার মূলে আছে টিকা। শরীর কীভাবে কাজ করে তা জানার মাধ্যমে নতুন টিকা প্রস্তুত করার কাজ সহজ হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com