পবিত্র হৃদয় জান্নাতে যাওয়ার পূর্বশর্ত। প্রত্যেক মুমিনের উচিত, হৃদয়ের পবিত্রতা অর্জন করা। অর্থাৎ অন্তরকে গুনাহ থেকে পরিচ্ছন্ন করা এবং হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, আত্ম-অহমিকা ও কপটতামুক্ত রাখা। মহানবী (সা.)-পবিত্র ও বিশুদ্ধ হৃদয়ের অধিকারী মানুষদের সর্বোত্তম মানুষ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-কে বলা হলো, কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী সত্যভাষী ব্যক্তি। ’ তাঁরা বলেন, ‘সত্যভাষীকে তো আমরা চিনি, কিন্তু বিশুদ্ধ অন্তরের ব্যক্তি কে?’ তিনি বলেন, ‘সে হলো পূত-পবিত্র নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ, যার কোনো গুনাহ নেই, নেই কোনো শত্রুতা, হিংসা-বিদ্বেষ, আত্ম-অহমিকা ও কপটতা। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২১৬)
সহজ-সরল নিষ্কলুষ হৃদয় মুমিনের ভূষণ। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি সরল ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে, কিন্তু পাপিষ্ঠ ব্যক্তি ধোঁকাবাজ ও নির্লজ্জ হয়। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯০)
মহানবী (সা.) এই অভ্যাসগুলো মোটেই পছন্দ করতেন না। কারণ এই অভ্যাসগুলো জান্নাতে প্রবেশে প্রতিবন্ধক। তাই তিনি সাহাবায়ে কেরামকে এ ধরনের অভ্যাস থেকে দূরে রাখতে, একে অপরের প্রতি (অহেতুক) অভিযোগের ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার সাহাবিদের কেউ যেন অপর সাহাবি সম্পর্কে আমার কাছে কোনো অভিযোগ না করে। কারণ আমি তোমাদের কাছে প্রশান্ত অন্তরে আসতে পছন্দ করি। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৬০)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরকে বিদ্বেষমুক্ত রাখার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে : হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই, যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু। ’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১০)
তা ছাড়া অপবিত্র অন্তর নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ সম্ভব নয়; তাই মহান আল্লাহ তাঁর যেসব বান্দাকে জান্নাতে দেবেন, তাদের অন্তরকে পবিত্র করে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের অন্তর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেব, তাদের পাদদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত হবে, আর তারা বলবে, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে এ পথ দেখিয়েছেন, আমরা কিছুতেই পথ পেতাম না, যদি না আল্লাহ আমাদেরকে পথ দেখাতেন। ’ আমাদের প্রতিপালকের রসুলগণ প্রকৃত সত্য নিয়েই এসেছিলেন। তাঁদেরকে আহ্বান করে জানানো হবে—‘তোমরা (দুনিয়াতে) যে আমল করতে তার ফলে তোমরা এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী হয়েছ। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৪৩)
মহান আল্লাহ সবাইকে অন্তরের পবিত্রতা অর্জনের তাওফিক দান করুন।