সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২২ অপরাহ্ন

অবৈধ আহারে মন মরে যায়!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৫১ বার

আল্লাহ তায়ালার কাছে ইবাদত গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রথম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। হালাল খাদ্যগ্রহণ। হারাম সন্দেহজনক ও অবৈধ খাবার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে না পারলে কোনো ইবাদত, দোয়া ও আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। মক্কা শরিফের খুরমা খেজুর কিংবা জমজম পানির ইফতার তাতে কী! উপার্জন যদি অবৈধ হয় রোজা কবুল হয় না।

আমরা পরম তৃপ্তিসহ সেহরি-ইফতারি খেয়ে রোজা পালন করে যাচ্ছি। প্রত্যেকেই নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখি- আমার ইফতার-সেহরির খাদ্য কি হালাল? স্বচ্ছ ও পবিত্র?

তা না হলে দিনভর উপোস থেকে কী লাভ? রাসুল (স) বলেছেন, অনেক রোজাদার আছেন, যাদের অনাহার কষ্টছাড়া কিছুই নয়। অনেক নামাজি আছেন, যাদের নামাজ রাতজাগা ছাড়া কিছুই নয়। সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৬৯০

হারাম উপার্জন সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মানুষ! পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র যা রয়েছে তা থেকে আহার করো। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সূরা বাকারা : ১৬৮

মহান আল্লাহ তায়ালা অন্যায়ভাবে সম্পদ উপার্জন থেকে মানা করতে আরও বলেছেন, তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অবৈধ পন্থায় গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিয়দংশ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকদের কাছে পেশ করো না। সূরা বাকারা : ১৮৮

হারাম উপার্জন ও হারাম খাদ্যগ্রহণের কঠোর সতর্কতা রয়েছে হাদিসে। ইবনে আব্বাস (রা) সূত্রে জানা যায়- মহানবী (স) বলেন, আর যে দেহ হারাম খাদ্যে গড়ে ওঠে তার জন্য জাহান্নামের আগুনই অতি উত্তম। তাবারানি শরিফ, মেশকাত শরিফ

হালাল উপার্জনের বিষয়ে ইমাম ওহাব ইবনুল ওয়ারদ (র) বলেন, যদি তুমি রাতভর খুঁটির মতো ইবাদতে দাঁড়িয়ে থাক, তবু তা তোমার কোনো কাজে আসবে না! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি নিশ্চিত হবে, তুমি যা খাচ্ছ তা হালাল না হারাম!

ইমাম সুফিয়ান সাওরি (র) বলেন, যে লোক অবৈধ অর্থ দিয়ে কোনো নেককাজ করে, সে পেশাব দিয়ে কাপড় পবিত্রকারীর মতো।

অবৈধ খাদ্যে মানুষের মন মরে যায়। বিবেক-বুদ্ধি থমকে দাঁড়ায়। ইবাদত-বন্দেগির স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়। বিবেকবান বন্ধুদের প্রতি নিবেদন- অন্তত পবিত্র রোজায় অবৈধ উপার্জন ও অবৈধ খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। নিজের উপার্জন যদি পুরোটাই অবৈধ বা অর্ধেক সন্দেহযুক্ত হয়, তা হলে রোজায় ব্যয়ের জন্য কোথাও থেকে ঋণ গ্রহণ করুন। তবু বৈধ টাকায় ইফতার-সেহরির ব্যবস্থা হোক। কোরআন-সুন্নাহ শুধু হারাম থেকে বেঁচে থাকতে বলেনি। হালাল ও বৈধ উপার্জনে উৎসাহিতও করেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, নামাজ শেষ করে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (হালাল রিজিক) সন্ধান করবে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে, যেন তোমরা সফলকাম হও। সুরা জুমা : ১০

রাসূলে আরাবিকে (স) জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- সর্বোত্তম উপার্জন কোনটি? জবাবে তিনি বলেন, ব্যক্তির নিজস্ব শ্রমের বিনিময়ে উপার্জন ও সততার ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয় করে। ইমাম আহমাদ, মুসনাদ, হাদিস ১৭৩০৪

এদিকে রোজাদার ব্যবসায়ী বন্ধুদের নিশ্চয় কামনা- নিজেদের নামাজ, তেলাওয়াত, রোজা, সাদকা আল্লাহর দরবারে গ্রহণ হোক। হালাল উপার্জনের যেমন বরকত ব্যবসায়ীরা পেয়ে থাকেন; তেমনি কেয়ামতের মাঠেও তাদের জন্য রয়েছে মর্যাদার সিংহাসন। হজরত রাসুল (স) বলেন, সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যবসায়ী পরকালে নবী, সিদ্দিকীন ও আল্লাহর পথে জীবন শহীদদের সঙ্গী হবেন। তিরমিজি : ১২০৯

কালোবাজারি, মজুদদারি, সিন্ডিকেট, ভেজাল, ওজনে কম-বেশির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন কি আদৌ বৈধ? তারাও কি পরকালে নবীর সঙ্গে জান্নাতে থাকবে?

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যসামগ্রীর মূল্য বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার পর অঢেল লভ্যাংশ কি বৈধ? তা হলে কালোবাজারি, মজুদদারদের ইফতার-সেহরির খাদ্য হালাল-হারামের বিষয়েও প্রশ্ন উঠবে; আপত্তি আসবে রোজার শুদ্ধি-অশুদ্ধিরও।

যেখানে পৃথিবীর সব দেশে ধর্মীয় সংস্কৃতি কিংবা দেশীয় উৎসব আয়োজনে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ছাড় দিয়ে থাকে, সেখানে মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশে ধর্মীয় উৎসব রোজা ঘিরে কালোবাজারির প্রতিযোগিতায় নামে একদল অসাধু ব্যবসায়ী।

তবে সাধু সাবধান! পৃথিবীর বাজারে লাভবান হলেও পরকালের প্রতিটি ঘাটে নাকানিচুবানির শিকার হতে হবে। তাই আসুন- নিজেদের পরকালকে সুখময়, আনন্দঘন করতে অন্যায় ও অবৈধ উপার্জন থেকে বিরত থাকি।

লেখক : সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com