এডিস মশার দেহে মানুষের রোগ প্রতিরোধক (বিশেষত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস) অ্যান্টিবডি স্থাপনে সÿম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মানুষের এই অ্যান্টিবডি এডিস মশার দেহে ডেঙ্গু ভাইরাসকে প্রতিরোধ করবে। গবেষণাগারে তৈরি এ ধরনের মশা কামড়ালেও মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাস স্থানান্তরিত হবে না। ফলে বিপজ্জনক এ মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গু আর আক্রান্ত হবে না। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি গবেষণা রিপোর্ট পিএলওস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এডিস মশার দেহে মানুষের রোগ প্রতিরোধকারী প্রোটিন (ইমিউন সিস্টেম প্রোটিন) ঢুকিয়ে দেন। তারা বলেছেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের চার ধরনের স্ট্রেইনের বিরুদ্ধেই মানুষের এই অ্যান্টিবডি কাজ করবে। মানুষের দেহের এই প্রোটিন মশার দেহে ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধি বন্ধ করবে। ফলে এডিস মশার দেহ থেকে মানুষের দেহে ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ভাইরাস থাকবে না।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রতি বছর কোটি মানুষের জীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়। ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের দেহে ঢুকলে উচ্চ মাত্রার জ্বরসহ (কোনো কোনো ÿেত্রে জ্বর কমও থাকে, বাড়ে না) বমি ও নাক, দাঁত, চোখ থেকে রক্ত বেরিয়ে যায়। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে বিশেষ প্রক্রিয়ায় স্ত্রী এডিস মশার দেহে মানুষের অ্যান্টিবডি প্রবেশ করিয়ে দেন। উলেøখ্য, অ্যান্টিবডি মানুষের দেহে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয় এবং এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে ধ্বংস করে। কোনো ধরনের ওষুধ ছাড়াই এ প্রক্রিয়াটি ঘটে থাকে। এ গবেষণার কো-অথর ড. প্রসাদ পারাধকার বলছেন, স্ত্রী মশার ভেতর অ্যান্টিবডি ঢুকিয়ে দিলে এটা সাথে সাথেই কার্যকর হবে। তখন থেকেই অ্যান্টিবডি মশার দেহে ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দেবে। বিজ্ঞানীদের ভাষায়, এই গবেষণাটি ডেঙ্গু ভাইরাস বা জ্বরের বিরুদ্ধে খুবই শক্তিশালী একটি অস্ত্র হবে। এটা জাদুমন্ত্রের মতোই বিস্ময়ের যে আমরা মশার দেহে ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধক প্রবেশ করিয়ে দিতে পারছি। ড. প্রসাদ পারাধকার আরো বলেন, মশা ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত না হলে তারা আর রোগ ছড়াতে পারবে না।
আশ্চর্যজনক এ কাজটির মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি স্ট্রেইনকেই ঠেকানো সম্ভব। এর আগেও এ ধরনের একটি গবেষণা সফল হয়েছিল। আগের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারটি ডেঙ্গু ভাইরাসের মাত্র একটি স্ট্রেইনকে প্রতিরোধ করতে পারত। পিরব্রাইন ইনস্টিটিউটের আরথ্রোপড জেনেটিকসের প্রধান প্রফেসর লিউক আলফি এ গবেষণাটি সম্পর্কে ব্রিটেনের মেইল অনলাইনকে বলেন, ‘বিশাল একটি কাজ হয়ে গেছে এ গবেষণার মাধ্যমে’। প্রতিটি ভাইরাসের বিরুদ্ধেই একই সাথে এটা কাজ করবে। উলেøখ্য, ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ওষুধ নেই। এটা দেহে কম মাত্রায় প্রবেশ করলে এক সপ্তাহ পর এমনিতেই শেষ হয়ে যায়।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে জ্বরের সাথে প্রচণ্ড মাথা ব্যথাও হয়ে থাকে। কোনো কোনো সময় ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরের ভেতরের অঙ্গকে অকার্যকর করে দিতে পারে। ত্বকে রক্ত জমে যায়। রক্তচাপ বিপজ্জনক মাত্রায নামিয়ে দিয়ে কোনো কোনো সময় এই ভাইরাস জীবন সংহারী হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী ৩৯ কোটি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় বছরে এবং প্রায় সাড়ে ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকে। এশিয়ার দেশগুলো, উত্তর আমেরিকা, মধ্য আফ্রিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের মানুষ এতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
প্রফেসর আলফি বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাস নিজের মধ্যে মিউটেশন করে এই অ্যান্টিবডি প্রতিরোধীও হয়ে যেতে পারে। এটি সবচেয়ে ভালো হবে যদি অনেকগুলো অ্যান্টিবডির একটি সমন্বয় মশার ভেতর প্রবেশ করিয়ে দেয়া যায়। তা হলে নির্দিষ্ট একটি অ্যান্টিবডি প্রতিরোধী হয়ে গেলেও অবশিষ্টরা কাজ করবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে।