বিশ্ব মঞ্চে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের আরো একটি শ্বাসরুদ্ধকর জয়। বাবর আজমদের দেয়া ১৬০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শেষ বলে ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় রোহিত শর্মার দল।
রোববার অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ক্রিকেট সমর্থকেরা বিশ্ব আসরে আরো একবার বিরাট কোহলির ব্যাটিং তাণ্ডব দেখল। হার্দিক পান্ডিয়াকে সাথে নিয়ে তিনিই মূলত পাকিস্তানকে হারের স্বাদ দিয়েছেন।
১৬০ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় ভারত। দ্বিতীয় ওভারের ৫ম বলে দলীয় ৭ রানে লোকেশ রাহুলের উইকেট হারায় ভারত। পাকিস্তানি পেসার নাসিম শাহ্ এর বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান রাহুল। ৮ বলে ৪ রান করে আউট হন তিনি। এরপর ইনিংসের চতুর্থ ওভারে দলীয় ১০ রানে আবারো উইকেট হারায় ভারত। ৪ বলে ৭ রান করে আউট হন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। হারিস রউফের বলে রোহিতের ব্যাটের কোনায় লেগে বলে চলে যায় স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা ইফতিখার আহমেদের হাতে। দুর্দান্ত ক্যাচে রোহিতকে বিদায় করেন ইফতিখার।
এরপর বিরাট কোহলি ও সূর্যকুমার যাদব মিলে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দলীয় ২৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় ভারত। ১০ বলে ১৫ রান করে হারিস রউফের দ্বিতীয় শিকার হন সূর্যকুমার যাদব। রউফের করা বলে উইকেটের পেছেনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সূর্যকুমার। শেষ পর্যন্ত ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৩১ রান সংগ্রহ করে ভারত।
ইনিংসের সপ্তম ওভারের প্রথম বলে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউটের শিকার হন ক্রিজে আসা অলরাউন্ডার অক্ষর প্যাটেল। ৩ বলে ২ রান করে ফিরে যান প্যাটেল। এরপর কোহলি ও পান্ডিয়া মিলে দেখে শুনে খেলতে থাকেন। ১০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৫ রান সংগ্রহ করে ভারত।
ইনিংসের ১২ তম ওভারের হাত খুলে খেলার চেষ্টা করেন কোহলি ও পান্ডিয়া। মোহাম্মদ নেওয়াজ বলে হার্দিক পান্ডিয়া ২টি ও কোহলি ১টি ছক্কা মেরে ২০ রান তোলেন এই দুই ব্যাটার।
শুরুর দিকের পাকিস্তানের বোলারদের তোপ সামলে কোহলি-পান্ডিয়া মিলে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে নিতে থাকেন ভারতকে। এই দুই ব্যাটারের জুটিতে ১৫ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে ১০০ রান তোলে ভারত।
শেষ ৩ ওভারে যখন ভারতের ৪৮ রান লাগে, তখন একের পর এক দুর্দান্ত শটে পাকিস্তানি বোলারদের দর্প চূর্ণ-বিচূর্ণ করেন কিং কোহলি। শেষ পর্যন্ত ৫৩ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছয়ে অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন কোহলি।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। শুরুতেই পাকিস্তানকে ধাক্কা দেন তরুণ পেসার আর্শদ্বীপ সিং। তিনি অধিনায়ক বাবর আজমকে রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখান। বাবরের বিদায়ের পর দ্রুতই ফেরত যান টি-টোয়েন্টির সেরা ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান। তিনি করেন মাত্র ৪ রান।
এরপর তৃতীয় উইকেটে দলের হাল ধরেন শান মাসুদ ও ইফতিখার আহমেদ। এ দুজনে গড়েন ৭৬ রানের জুটি। শান মাসুদ শান্ত থাকলেও ব্যাটে ঝড় তোলেন ইফতিখার। তিনি অক্ষর প্যাটেলকে টানা তিন ছয় মেরে ওই ওভারে নেন ২১ রান।
যদিও পরের ওভারে ইফতিখার ঝড় থামান বুমরাহর পরিবর্তে স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ শামি। বিদায়েরর আগে ইফতিখার ৩৪ বলে ৪ ছয় ও ২ চারে করেন ৫১ রান। এটি ছিল ইফতিখারের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক। এরপরই পাক শিবিরে জোড়া আঘাত করেন অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। একই ওভারে তিনি তুলে নেন শাদাব খান ও মোহাম্মদ নওয়াজকে। তখন দলীয় স্কোর ১১৫ রান।
অপরপ্রান্তে থাকা শান মাসুদ ৪০ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশত। শাহিন শাহ আফ্রিদি শেষ দিকে ৮ বলে ১৬ রানের একটি ক্যামিও ইনিংস উপহার দেন। শেষ পর্যন্ত মাসুদ ৪২ বলে ৫ চারের সাহায্যে ৫২ রানে এবং হারিস রউফ ৪ বলে ৬ রানে অপরাজিত থাকেন।
ভারতের হয়ে আর্শদিপ সিং ও হার্দিক পান্ডিয়া ৩টি করে, মোহাম্মদ শামি ও ভুবনেশ্বর কুমার একটি করে উইকেট লাভ করেন।