বিশ্বের চার দিকে যত প্রকার সামাজিক ভাইরাস বিস্তার লাভ করছে সেগুলোর মধ্যে আত্মহত্যা অন্যতম। বিশেষ করে এই ভাইরাসটি তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেশি বিদ্যমান। এদের কাছে জীবনটা যেন খুবই তুচ্ছ, যেন এর কোনো মূল্য নেই। তারা যেন দেহ থেকে প্রাণটা বের হতে আনন্দ পায়! কতই না অদ্ভুত তাদের সিদ্ধান্তগুলো!
জীবন হলো সুখ-দুঃখের সংমিশ্রণ। এই জীবনে কখনো পরিপূর্ণ সুখ পাওয়া সম্ভব নয়। কেবল তা জান্নাতেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘নিশ্চয় কষ্টের সাথেই রয়েছে সুখ’। (সূরা-ইনশিরাহ-৬) এই আয়াতের ব্যাপক অর্থ রয়েছে। তবে এই আয়াতের একটি দিক আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সুখ-দুঃখ হলো এই দুনিয়ারই একটি নিয়ম। কখনো কখনো আপনাকে বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আবার কখনো সহজতার মধ্যে প্রশান্তিতে গা ভাসিয়ে চলা যাবে। তাই কঠিন মুহূর্তগুলো উপস্থিত হলে শক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
মানুষ সাধারণত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় না। প্রতিটি আত্মহত্যার পেছনে থাকে অনেক কারণ। যেমন- পারিবারিক চাপে অসহ্য, ব্ল্যাকমেইলের শিকার, অবৈধ সম্পর্কে ফেঁসে যাওয়া, অপমান সহ্য করতে না পারা, নেশাগ্রস্ততা, বাজিমাত ও শারীরিক রোগের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির কারণ ইত্যাদি। পরিস্থিতিগুলো সহজ নয় বটে; কিন্তু তাতে কি সমাধান হয়ে যায়? বস্তুত, আত্মহত্যার আগে মানুষ যতটা না ঘৃণা করে, তার চেয়ে বহুগুণ ঘৃণা বেড়ে যায় আত্মহত্যার পর। মানুষ ধিক্কার দিতে থাকে; এমনকি অভিশাপ দেয়া থেকে শুরু করে জানাজার সালাত পর্যন্ত নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া মৃত্যুর পরও দেহটা দেহের অবস্থায় থাকে না। ছিন্নভিন্ন করে ফেলে সরকারি কর্তৃপক্ষ। কতই না লাঞ্ছনা!
আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া মানুষগুলো মনে করে তাদের মৃত্যুতে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সব কষ্ট থেকে যেন মুক্তি পেয়ে যাবে; বরং তাদের কষ্ট তো কেবল শুরু হয় তাদের মৃত্যুর সূচনা দিয়ে। হাদিসে মৃত্যুর সীমাহীন যন্ত্রণার কথা এসেছে যার সমতুল্য কোনো যন্ত্রণা পৃথিবীর বুকে নেই। পাপিষ্ঠদের প্রাণ এমনভাবে বের করা হয় যেন ঘন কাঁটাযুক্ত ডাল থেকে তুলো বের করে আনা হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে, একটি প্রাণীর জীবিত অবস্থায় চামড়া আলাদা করলে যেমনটি হবে। তা ছাড়া আত্মহত্যাকারী নিশ্চিত জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। হাদিসে এসেছে, ‘এক যুদ্ধে এক ব্যক্তি বড় বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করছিল। সবাই তার প্রশংসা করতে লাগল। মহানবী সা: বললেন, ‘কিন্তু ও জাহান্নামী।’ কারণ লোকটি যুদ্ধের ময়দানে আঘাতপ্রাপ্ত ক্ষতের যন্ত্রণায় অসহনীয় হয়ে নিজের তরবারি দিয়ে আত্মহত্যা করে। (বুখারি-২৮৯৮, মুসলিম-৩২০)
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করব। এটি আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সূরা-নিসা : ২৯-৩০)
আত্মহত্যাকারীর শাস্তির বিষয়ে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রা: রাসূলুল্লাহ সা: থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে (পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে) আত্মহত্যা করতে থাকবে। এটি হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সারাক্ষণ বিষপান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটি হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সেই লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢোকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ (বুখারি-৫৩৩৩) অর্থাৎ যে যেমনভাবে আত্মহত্যা করবে ঠিক সেভাবে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। তবে শাস্তির তীব্রতার পরিমাণ কতটুকু ভয়াবহ হবে তা কল্পনাতীত!
এখন প্রশ্ন হলো- দুনিয়ার এই সামান্য অপমান, লাঞ্ছনা, কষ্ট ইত্যাদি জাহান্নামের তুলনায় কি একটু বেশি হয়ে গেল?
পথ চলতে হাজারো বাধা-বিপত্তি আসবে এবং সব বাধা সংগ্রামের সাথে উপেক্ষা করে যেতে হবে। আর এটিই দুনিয়ার বাস্তবতা। একমাত্র দুশ্চিন্তামুক্ত প্রশান্তিতে থাকার নাম হলো জান্নাত। তা এই জীবনে পাওয়া কখনো সম্ভব নয়। তবে আল্লাহর রহমত থেকে কখনো নিরাশ হওয়া যাবে না। কারণ পবিত্র কুরআনে এসেছে- ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ (সূরা ইউসুফ-৮৭) অর্থাৎ, কখনো হাল ছাড়া যাবে না, আল্লাহর সাহায্য পাওয়া থেকে নিজেকে কখনো বিমুখ করা যাবে না। কারণ রবকে হারালে সব কিছু হারাবেন। এমনকি আপনার অস্তিত্বের মূল্য পর্যন্ত থাকবে না। তাই রবের আশ্রয়ে সর্বদা সব সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। কারণ সব সমস্যার সমাধান তো কেবল তাঁর কাছেই নিহিত। পাশাপাশি আত্মহত্যার কাছে পৌঁছে দেয়া এমন যাবতীয় কার্যকলাপ থেকেও অবশ্যই বিরত থাকা উচিত। যেমন- মারাত্মক অনলাইন-অফলাইন গেমে আসক্তি, অবৈধ রিলেশনশিপ, মাদকাসক্তি, নেশাগ্রস্ততা ও বাজিমাত ইত্যাদি। এসব অহেতুক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকলে আশা করা যায়, এমন ঘৃণিত কাজ আর সঙ্ঘটিত হবে না।
অতএব, বাঁচতে শিখুন, বেঁচে থাকার অনেক ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণা রয়েছে। সর্বদা ভালো কারো সঙ্গ নিন, তাদের পাশে থাকুন। হাসার চেষ্টা করুন।
লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম