বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে এবারের থার্টিফার্স্ট নাইটে কোনো আয়োজন ছিল না। তারপরও ২০২০ সালের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে এবং সৈকতের অপরূপ বালিয়াড়ি ও উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন অর্ধ-লক্ষাধিক দেশী বিদেশী পর্যটক।
এই থার্টিফার্স্ট নাইটকে ঘিরে পর্যটন শহরের সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ প্রায় ৭০ ভাগেরও বেশি পর্যটকে পরিপূর্ণ। পাশাপাশি টুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তার প্রস্তুতিও নিয়েছে চোখে পড়ার মতো।
অন্যদিকে করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সৈকতে নামতে পর্যটকদের সচেতন করতে কাজ করছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
সূত্রমতে, প্রতিবছর ইংরেজি পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হত সব হোটেল ও মোটেলকে। কিন্তু এ বছর তা চোখে পড়েনি। তবে করোনার মহামারিতে হোটেল-মোটেলে পর্যটকের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো।
চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট থেকে আসা দম্পতি ইফতেখার মো. ইমন জানান, করোনার মহামারিতে দীর্ঘ সময় বাসার বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই কক্সবাজার ঘুরতে এসেছি।
তিনি বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে বাড়তি কোনো আয়োজন না থাকলেও পরিবারের সঙ্গে বেশ ভাল সময় কাটাচ্ছি।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল কাশেম শিকদার বলেন, করোনার মাঝেও এবার হোটেল রিজার্ভেশনের পরিমাণ খুবই ভালো ছিল। বেশিরভাগ বুকিং ছিল কয়েক মাস আগের। তবে বর্তমান সময়ে পর্যটকের আগমন সন্তোষজনক।
তিনি বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে প্রতি বছর তারকা মানের হোটেলগুলোতে থাকত ইনডোর প্রোগ্রাম। কিন্তু করোনার জন্য এবার সেটাও থাকছে না।
এদিকে থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কোনো আয়োজন না থাকলেও সমুদ্রে উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে পর্যটকের আনন্দ ভাগাভাগিতে কোনো প্রকার কমতি ছিল না। তবে নিরাপদে গোসল নিশ্চিতে পর্যটকদের উপর লাইফ গার্ডের কর্মীদের চোখ ছিল খুবই প্রশংসনীয়। যে কারণে অন্যান্য বারের তুলনায় এবারে তেমন কোনো দুর্ঘটনার খবর মেলেনি বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত জুড়ে।
লাইফগার্ড কর্মী ইয়াসিন জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতের সাগরে গোসল করতে নামা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা যেন কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন না হয় সে জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এবারের থার্টিফার্স্ট নাইটে যে সব পর্যটক সাগরে গোসল করতে নেমেছেন তাদের প্রতি কঠোর নজরদারি রয়েছে লাইফ গার্ডকর্মীদের। যে কারণে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
একইভাবে পর্যটকদের আগমনকে ঘিরে নতুন করে নিরাপত্তার সাজিয়েছিল বলে জানায় টুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজারের টুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান বলেন, কলাতলী থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস পয়েন্ট পর্যন্ত টুরিস্ট পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল চোখে পড়ার মতো। কারণ এই জায়গায় পর্যটকের আগমন ছিল খুবই বেশি। পাশাপাশি ছিল মোবাইল টিম ও রেসকিউ টিমও।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আল আমিন পারভেজ বলেন, বর্তমান সময়ে সব স্তরের মানুষকে সচেতন হয়ে চলতে হবে। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করা সবার দায়িত্বেও মধ্যে পড়ে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে যেসব পর্যটক কক্সবাজার এসেছেন সৈকতে নামার সময় তাদেরকে মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে কঠোরভাবে সচেতন করা হচ্ছে।
এদিকে ২০২০ সালকে বিদায় ও ২০২১ সালকে বরণ করতে সৈকত শহর কক্সবাজারে অর্ধ-লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনার মহামারিতেও পর্যটকদের ভিড় জমেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, শাহ পরীর দ্বীপ, ইনানি, হিমছড়ি, রামুর বৌদ্ধপল্লী, চকরিয়ার ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ, সোনাদিয়াসহ পুরো কক্সবাজারের পর্যটন স্পটে।